পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক : চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনকে।
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন— চন্দন, আমান দাস, শ্রী শুভ কান্তি দাশ, বুজা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাশ, ওমকার দাশ, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, শ্রী গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য্য।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে (৩৮) রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে আসামিপক্ষের নিযুক্ত ইসকনপন্থি আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে অশালীন ভাষায় বিভিন্ন আজেবাজে মন্তব্য করেন এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। তখন ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান করে দায়িত্বরত পুলিশের কাজে বাধা প্রদান করে। তাদের অনেকে প্রিজন ভ্যানের সামনে ও পেছনে শুয়ে পড়ে দীর্ঘ আড়াই-তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে জটলা বাঁধিয়ে রাখে। তখন আসামিরা জয়ধ্বনি দিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে, জয় শ্রী-রাম, জয় শ্রী-রাম ধ্বনিসহ বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স, আনসার ও বিজিবি এসে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের এবং সরকারি গাড়িসহ আনুমানিক ২০-৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম আদালত ভবন থেকে নামেন। তিনি এসি দত্ত লেনের সামনের রাস্তায় পৌঁছামাত্র তার মুখে দাঁড়ি এবং আইনজীবীর পোশাক দেখে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ইন্ধনে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নামে জয় ধ্বনি দিয়ে তার ওপর হামলা করে। আসামিরা ভুক্তভোগীর ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় আসামিরা সাইফুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা ঘটনাস্থল থেকে মুর্মূষু অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন ইসকন ও চিন্ময়ের অনুসারীরা। টানা কয়েক ঘণ্টার বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিকেলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেন কিছু ইসকন অনুসারী। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং স্থানীয় কয়েকজনের করা ভিডিও ফুটেজে হত্যার চিত্র দেখা যায়।