পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক : কবর থেকে তোলা হবে সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নয় জনের মরদেহ। ময়নাতদন্তের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হলে যে কোনো দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে মরদেহগুলো কবর থেকে তোলা হবে।
পুলিশের সূত্র জানায়, সরকার পতনের কারণে সে সময় মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত করা হয়নি। যে কারণে ময়নাতদন্তের জন্য মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মরদেহ তোলার আদেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ছয়টি ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৩টি মরদেহ কবর থেকে তোলার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদালত ও গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে ছাত্র-আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৪), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয় (২০), শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩) ও ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন (৩৫)।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথক ছয়টি মামলা হয়। অন্য একটি মামলা করা হয় আদালতে। সবকটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের জানিয়েছেন, অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন ময়নাতদন্তের জন্য নিহত ৬ জনের মরদেহ উত্তোলন করা হবে। নির্বাহী মাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহগুলো উত্তোলন করা হবে।
এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫ আগস্টের ঘটনাবহুল দিনে বিকেলে উশৃংখল জনতা উপজেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও থানায় হামলা চালায়। পুলিশের গুলিসহ একাধিক অস্ত্র খোয়া যায়। হামলার ভয়াবহতায় সেদিন প্রাণ রক্ষার্থে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যান। আহত হন আরোও অন্তত: ১০জন। এসব ঘটনায় নিহত তারেক আহমদ, রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলামকে ৬ আগস্ট দিনের বিভিন্ন সময়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেন স্বজনরা। জানা যায়, নিহত তারেক আহমদকে তার গ্রামের বাড়ি কটুখালিরপার, ময়নুল ইসলাম ও রায়হান আহমদকে পৌরশহরের নয়াগ্রামে দাফন করা হয়েছে। আহতদের অনেকেই এখনো পুরোপুরি সূস্থ হতে পারেননি।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় পৃথক ৪টি মামলা হয়। সবকটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: এনামুল হক চৌধুরী জানান, আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা এখনো হাতে আসেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের স্বার্থে আদালত ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মরদেহ কবর থেকে তোলার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুরো আদেশ পাওয়ার পর নির্বাহী মাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলন করা হবে।