পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক : ফের বন্যায় উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। গোয়াইনঘাটের যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কানাইঘাট পৌর শহরে কোমড় সমান পানি। পানিবন্দি ঈদ কাটানো মানুষগুলো এখন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়ের সন্ধানে। আজ বুধবার সিলেটে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
ঈদের দিন (১৭ জুন) থেকে আজ বুধবার (১৮ জুন) পর্যন্ত ৪টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফের বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কানাইঘাট পৌর শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। সুরমা পানি উপচে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের অর্ধশতাধিক এলাকা।
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফের বন্যায় সিলেটের মানুষ। সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি।তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সিলেট নগরে ঢুকছে বন্যার পানি। সুরমা নদীর পানি উপচে ইতিমধ্যে ১০ টি ওয়ার্ডের ৫০টি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। দক্ষিন সুরমার বরই কান্দিতে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী মানুষ ঈদ কাটিয়ে এখন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়ের খোজে ছুটছে। গেল বন্যার ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফায় চলতি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ফের বন্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মানুষ বন্যা কবলিত। পৌরসভার আংশিক নতুন করে প্লাবিত। এদিকে অতি বৃষ্টিতে ঝুকিপূর্ণ টিলা ও বসতবাড়ি স্থান সমূহে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। টিলার পাদদেশে অবস্থানরতদেরকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিজে নিরাপদ থাকি পরিবারকে নিরাপদ রাখি।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী শামীম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে বিয়ানীবাজার উপজেলায় সৃষ্ট বন্যায় বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে এবং অসংখ্য লোকজানের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় তারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে। এ উপজেলায় সর্বমোট ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে আশ্রয়কেন্দ্রসমূহের পাশাপাশি বিয়ানীবাজারস্থ বিভিন্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয় নেওওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমা থেকে ১৩৪ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে ২৪ ঘন্টায় মঙ্গলবার ৩ টা পর্যন্ত ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে- ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ধারা আজও অব্যাহত থাকায় দ্রুত বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি।
এদিকে মৌলভীবাজারের ৬টি জেলার ৩৭ ইউনিয়নের ৩৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এক লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ মানুষ। বড়লেখা উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কয়েকটি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে বড়লেখার ১০টি, জুড়ীর ৬টি, কুলাউড়ার ৬টি, সদরের ৪টি ও রাজনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, শ্রীমঙ্গলের ৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।
এদিকে বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের ইটাউরি, কবিরা, চরিয়া, মাইজ গ্রাম, আদমপুর সহ বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল হক জানিয়েছেন, কবিরা, নোয়াপাড়া, কান্দি গ্রাম, চরিয়া, বিহাইডহর নয়াটিলা, ভাগল, পকুয়া-সুফিনগরের বড় একটা অংশ, গল্লা সাংগন ও নিজবাহাদুরপুর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মাইজ গ্রাম, আদমপুর ও নয়াবস্তি বন্যায় কবলে রয়েছে। তন্মধ্যে কবিরা, চরিয়া ও নোয়াপাড়ার বন্যা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বেশিরভাগ ঘরে পানি উঠে গেছে। পরগনাহী দৌলতপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসা ও ইটাউরি মহিলা আলিম মাদরাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি খাদ্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকারের সহায়তার পাশাপাশি সকল বিত্তবানদেরকে শিশুখাদ্যসহ বিগত দিনের ন্যায় বন্যা কবলিত জনগণের পাশে দাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন তিনি।