পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক : নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও দেয়া হবে। প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে।’
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন সবার মনেই আছে। নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সব দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি সরকারকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথাও ভাবতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর।
‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবো। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবো।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আরও কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে যা একটি অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।
‘তবে আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার।’
দেশবাসীকে এসব ইস্যুতে মতামত দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন।
‘আপনি দেশের মালিক। বলে দিন আপনি কি চান। কীভাবে চান। নির্বাচন নিয়ে সব বক্তব্য বিনা দ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ, সংস্কারের কথাটাও একইসঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ করে দেবে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দল এবং দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য তা হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনি আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
‘আমরা চাইবো, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগ যুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেল লাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি। আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে আলাপ চলতে থাকবে। নির্বাচন ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার ব্যাপারে ঐকমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে। দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকবো- কী কী সংস্কার নির্বাচনের আগে আপনারা করে নিতে চান। ‘নির্বাচনের আয়োজন চলাকালে কিছু সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।’