আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান। শনিবার (১৫ জুন) আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন সারা বিশ্ব থেকে জড়ো হওয়া ১৮ লাখের বেশি হজযাত্রী। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানেই অবস্থান করবেন তারা। মূলত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেটস এ খবর জানিয়েছে।
মক্কা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল ময়দানে সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড কাপড় পরে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজির থেকে ইবাদত বন্দেগিতে কাটানোই হল হজ। শুক্রবার রাতেই অধিকাংশ হজযাত্রীকে মোয়াল্লিমরা গাড়িতে করে নিয়ে আসেন আরাফাতে নির্ধারিত তাঁদের তাঁবুতে। অনেকে শনিবার সকালেও আসেন। এখানে হজযাত্রীদের ফজর ছাড়াও এক আজান ও দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন।
শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের মূল খুতবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুআইকিলি। খুতবাটি হজরত মুহাম্মদ (স.) এর বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (স:) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ কারণে আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না।
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না আদায় করেই হজযাত্রীরা যাবেন মুযদালিফার উদ্দেশে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করেন। এখানে উন্মুক্ত আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রি যাপন করবেন হজযাত্রীরা। শয়তানের উদ্দেশে পাথর সংগ্রহ করতে হয় মুজদালিফায় অবস্থানের সময়,রাত কিংবা সকালে। এ জন্য বিশেষ ধরনের ছোট ছোট পাথর ছড়িয়ে রাখা হয় পুরো মুযদালিফাজুড়ে।
১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। এরপর মিনায় কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। কোরবানির পরপরই মাথা মুণ্ডন করার নিয়ম রয়েছে।
হজের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা কাবাঘর প্রদক্ষিণ, যা ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে সম্পন্ন করতে হয়। ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে ধারাবাহিকভাবে ছোট,মধ্যম ও বড় জামরায় সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হয় প্রতিদিন।
১০-১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় রাতযাপন করতে হয়। কেউ মিনা ত্যাগ করতে চাইলে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে চলে যেতে হবে। এ সময়ের মধ্যে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করতে হবে। সেদিন সাতটি করে আরো ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। দেশে রওনা হওয়ার আগে তাওয়াফ করতে হয়,যাকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে।
শনিবার প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন হজ পালন করছেন। এর মধ্যে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন বিদেশি আর ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন সৌদির হজযাত্রী। এর মধ্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসিসহ বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছেন।
এই বছর ১২ বছর পর সিরিয়ার হজযাত্রীদের প্রথমবারের মতো হজ করতে দেখা গেছে।