1. news@panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই : পঞ্চখণ্ড আই
  2. info@www.panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই :
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
পার্কে অবৈধ বিশ্রামে ১৬ কিশোর-কিশোরী আটক, ৮ জনের বিয়ে আগামী বুধবার প্রয়াত ফুলতলী পীরের ঈসালে সাওয়াব মাহফিল শিক্ষক এনামুল মজিদ এর মৃত্যুতে বাশিস ও প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা নেতৃবৃন্দের শোকবার্তা প্রসঙ্গ: ইএফটি’র বেতন ভোগান্তি ও প্রত্যাশা চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি: জানুন কার কত বাড়ছে বিয়ানীবাজার বিএনপির ৬১ নেতাকর্মী খালাস পেলেন বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা থেকে জনস্বার্থে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার সিলেটস্থ বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও মেধা বৃত্তি অনুষ্ঠান সম্পন্ন বিয়ানীবাজার সমবায় মার্কেটের নতুন কমিটি গঠিত ২০২৪ এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণদের শ্রীধরা জনমঙ্গল সমিতির সংবর্ধনা

কোটা আন্দোলন ও অশুভ শক্তির মহড়া

আতাউর রহমান
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

আতাউর রহমান:
ভীষণ একটা হুছট খেল স্বদেশ। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালুর মধ্য দিয়ে ব্যাংক, অফিস-আদালত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র ও বিপণীবিতান খোলা হলেও সারাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারী সিটিজেনরা ছিল ইন্টারনেটবিহীন। এত বিপর্যস্ত হলো কি করে! প্রিয় দেশ কি অপরাধ করেছিল। কারফিউ, সাধারণ ছুটি, সেনাবাহিনী মোতায়েন পরবর্তী স্বস্তি দিতে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। কেন হলো এমন দুর্দশা? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কিছুই টের পেলো না! তাদের কর্মদক্ষতা কি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি! এ বিপর্যস্ততার পেছনে-বা কাদের হাত ছিল- তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। প্রশ্ন হলো- কেন এ নাশকতার গন্ধ কেউ আগাম টের পেল না? শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ঢাল বানিয়ে যারা ন্যাক্কারজনক নাশকতা ঘটালো- ওরা আসলে কি চায়! কোটা সংস্কারকারীদের ভাষ্যমতে, তাদের আন্দোলনের সাথে এহেন নাশকতার কোন সম্পর্ক ছিল না। তাহলে নাশকতার সাথে কারা সম্পৃক্ত ছিল। যারা ধ্বংসাত্মক কর্মে লিপ্ত ছিল, তাদের আকাঙ্খা ও লক্ষ্য অনুসন্ধান হওয়া দরকার। সেদিকে মনোনিবেশ দিয়ে ঠান্ডা মাথায় দায়িত্বশীলদের অগ্রসর হওয়াই সমীচীন হবে।

এ বিনাশী প্রবাহের ধারায় স্বদেশ থেকে কত তাজা প্রাণ বিদায় নিল, ক’জনা আহত হলো, ক’জন চিকিৎসার সুযোগ পেল, সেসব পরিসংখ্যানও অজানা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরাও ভালো নেই। তাদের চলমান পরীক্ষা স্থগিত, তালবেতাল হয়েছে তাদের দৈনন্দিন রুটিন। পরিস্থিতি হয়তো নিয়ন্ত্রণে ফিরবে। কিন্তু নাশকতার ভয়, আতংক কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ পেতে অনেক দিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা স্পষ্টীকরণ ছাড়া এ মুহুর্তে কিছুই বলার নেই। সুতরাং পরিস্থিতি শীতল হোক, পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক- এ মুহুর্তে এটাই কাম্য।

এবার কোটা সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সকল পেশাজীবি মানুষের মৌণ সমর্থন ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী নেতৃত্বের অজ্ঞাতসারে ১৮ জুলাই আহবানকৃত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নামক আন্দোলনটি যখন ছিনতাই হলো, তখন থেকে দেশে শুরু হলো অবর্ণনীয় ও নারকীয় তাণ্ডবলীলা। দেশের মেট্রোরেল ভাংচুর, সেতু ভবন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট-সহ বিটিভি দখলে নিয়ে যারা চেয়েছিল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দিতে। তাদের সেই ঘোষণার ব্যর্থ অপচেষ্টার বর্ণনা দিয়ে বিটিভির জি এম মোছা: মাহফুজা আক্তার রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। একইদিনে জাতীয় বিজ্ঞান ও গবেষনাগারে হামলা, রফতানি ভবনের দরজা ভেঙে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টাকাকড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, নরসিংদী কারাগারে হামলা ও অস্ত্র লুটপাট, জঙ্গিদের ভাগিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি কিসের আলামত ছিল! এসব নাশকতার কাজ তো শিক্ষার্থীদের করার কথা নয়। অথচ এ তাণ্ডবিলীলায় দিনবর দেশের চারিদিকে পুড়ো পুড়ো গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো। দেশের সকল আইকনিক স্থাপনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টার্গেট করে কেন এ হামলা চালালো বিনাশকারীরা। এ বিনাশকারীরা কি কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিল? যদি পক্ষে না-ই থাকে, তবে এ বিনাশের নেপথ্যে কি দুরভিসন্ধি তাদের থাকতে পারে! দেশজুড়ে দুষ্কৃতকারীদের ঘটানো এসব তাণ্ডব ছিল জাতির কাছে এক বিস্ময়কর, অনভিপ্রেত ও ধিক্কারের ঘটনা। এসব ঘটনার রোষানলে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল ত্যাগ করতে হলো, কেউ কেউ ঘটনাক্রমে অহেতুক নির্যাতিত হলো। মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই কারফিউ ঘোষণা করা হলো। সাথে নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটিও আসলো। নাশকতাকারীদের দ্বারা ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় ১৯ জুলাই থেকে ভার্চুয়াল লেনদেন দুনিয়ায় বাংলাদেশে ই-কমার্স সংযোগ থেকে জনগণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিয়ে যখন আপীল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় ছিল; তখনই কোটা সংস্কারের শাটডাউন আন্দোলন নিমেষেই ছিনতাই হয়ে গেল। যা দেশবাসী স্বচক্ষে দেখেছে। অত:পর গত ২১জুলাই হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপীল বিভাগের দেয়া রায়ে সংস্কার আন্দোলনকারীরা ন্যায্য দাবির প্রতিফলন দেখে প্রদত্ত রায়কে স্বাগত জানালো। আপীল বিভাগের এ বিচক্ষণ রায়ের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আলোকে সরকারি চাকুরীতে বেতন স্কেলের ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত মেধাবী ৯৩%, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা সন্তান ৫%, ক্ষুদ্র নৃ-গোস্টি ১% ও প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ১% নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি হলো। তবে রায়ে আদালত বলেছেন, এই আদেশ সত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবেন। এই কোটা ব্যবস্থা সরকারি চাকুরিতে নতুন নয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। তন্মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী। কিন্তু আদালতের রায় ও প্রজ্ঞাপন জারির আগেই সিদ্ধান্তের জেদাজেদি ও ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশের বিপর্যয়ের পাশাপাশি যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে গেল, তা সীমাহীন। যে মায়ের কোল খালি হলো, যে পরিবার ধ্বংস হলো, সেই শূন্যতা ও এর দায়-দায়িত্ব কি দিয়ে আর পূরণ হবে? ক্ষতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, আন্দোলনের নামে হারাতে হয়েছে ছাত্র, সাংবাদিক ও পুলিশের তাজা প্রাণ। এ কষ্ট-তো ভুলার নয়। অত:পর মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় ও নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়ে, কারফিউ দিয়ে, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে যেভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, তা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই। শিক্ষাজীবন নিয়ে তারাও চিন্তিত। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা দেয়া অচল হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের ভার্চুয়াল অর্থনৈতিক লেনদেন পড়ে হুমকির মুখে। বিদ্যুৎ, গ্যাসবিল, অনলাইন টাকা লেনদেন, কেনাবেচা, টিকিট ক্রয় ও পড়াশোনা-সহ ইন্টারনেটের সকল সেবাই বন্ধ হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিতে চলে ভয়াবহ অবস্থা। বাজারে লাগামহীন দ্রব্যের দাম, কোন জবাবদিহিতা নেই। সব মিলিয়ে মানুষের পিঠ দেয়ালে লেগে যায়। দৈনন্দিন জীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা হয় ব্যাহত। নেট দুনিয়ায় বাহিরে থাকায় এ লিখাটিও নোটবুকে আটকা পড়ে। তবে ঘটনা প্রবাহে পরিস্কার যে, এসব ঘটনা ছিল পরিকল্পিত।

বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা তাদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যেভাবে আন্দোলন ছিনতাই করে বিনাশকারীরা দেশের সম্পদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তছনছ করেছে, তা কোনক্রমেই ছেড়ে দেয়া যায় না। দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ ইতিমধ্যে নৈরাজ্যকারীদের সনাক্ত করতে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। এ সনাক্তকরণ কাজটি সময়ের দাবি। শুধু অভিযান নয়; তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে ভবিষ্যত দেশ পরিচালনায় আবারও যে এমন পরিস্তিতি সৃষ্টি হবে না, তার আশংকা কি উড়িয়ে দেয়া সম্ভব! শুভ শক্তির বিরুদ্ধে কখনোই অশুভ শক্তির মহড়া চলতে দেয়া ঠিক হবে না। এভাবে আর কত চলবে। শক্ত হাতে প্রতিরোধ করে আশংকামুক্ত পরিবেশ আনা জরুরি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সিটিজেনরা সেই স্বাভাবিক সময়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

Leave a Reply

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট