আব্দুদ দাইয়ান : বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের ডিসেম্বরের বেতন ইএফটি’র মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ সোসাল মিডিয়ায় আমাদের অতি উৎসাহী শিক্ষক কেউ কেউ সাধুবাদ দিচ্ছেন কারণ প্রথম দিন নাকি বেতন পেয়ে গেছেন ও আরও অনেক কিছু লিখে যাচ্ছেন। উনাদের লিখা কাহারও কাহারও হাসির খোরাক হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের বুঝা উচিৎ আমদের অনেক অনুসারী আছে, যারা আমাদের অনুসরণ করে সম্মান করে। যাক, এখন মূল বিষয়ে আসি। সম্প্রতি ইএফফটি’র মাধ্যমে মাত্র ১,৮৯০০০ জন শিক্ষক প্রথম ধাপে বেতন পেয়েছেন আজ থেকে ১১ দিন আগে.। আর বাকী আরও ১,০০,০০০ জন শিক্ষক এ সপ্তাহে পেতে পারেন আর বাকী অনেকের বেতন নাকি পাওয়া অনিশ্চিত। অর্থাৎ তাদের তথ্যগত ভূল গুলি সংশোধনের পর পাবেন। এখন প্রশ্ন হলো এক ধাপ দিয়ে বাকী ধাপ করতে যদি এত সময় লাগে তাহলে বাকী শিক্ষকদের বেতন দিতে ২/৩ মাস চলে যাবে। আমার ধারনা, অন লাইনের কাজ নিয়মিত করলে এত দেরী হওয়ার কথা নয়। চলতি জানুয়ারি মাসে অনেক শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। এ জটিলতায় যদি তারা বেতন না পায় বা সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে এবং এমপিও শীটে যদি নাম না থাকে, তাহলে তারা কিভাবে সংশোধন করবে? না কি, ধরে নেয়া হবে এ নিয়োগ সঠিক নয়। অধিকন্তু তাদের অবসর কল্যাণের টাকা প্রাপ্তির কি হবে? এ এ শিক্ষকদের মনের অবস্থা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
দ্বিতীয়ত: আজ থেকে বছর খানেক আগে ইএফটির তথ্য নেয়ার পর জানা গেলো তথ্য সঠিক না থাকায় ইএফটিতে বেতন দেয়া সম্ভব হয় নাই, কথাটি আমাদের অতি উৎসাহী শিক্ষদের কাছ থেকে শোনা। তবে এ প্রসঙ্গে আমাদের বিভাগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই বা তথ্যগুলো সঠিক করার জন্য বলাও হয় নাই। যদি আগে থেকে এ ধরনের সমস্যা জানা থাকতো তাহলে ভুলগুলো সঠিক করার নির্দেশ দিলে শিক্ষকরা ঠিক করে নিতে পারতেন।
শিক্ষকরা মনে করছেন বা ধরে নিয়েছেন হয়তো বা ইএফটিতে বেতন দেয়ার বাধ্যবধকতা নাই। যদিও প্রথম থেকেই সরকারি চাকুরীজীবিরা ইএফটিতে বেতন পাচ্ছেন, তারাও এদেশের মানুষ। সেখানে নিশ্চয়ই অনেক ভুল ছিলো, কিন্তু তাদের ব্যাপারে এত হৈচৈ শুনা যায় নাই। এবার তথ্য নিয়েই বেতন দেয়া শুরু করলেন আর এ জন্যই দেখা দিল এ সমন্বয়হীনতা। কারন তথ্য নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার আলোকে দু’এক মাস পরে ইএফটিতে বেতন শুরু করলে তো কোন অসুবিধা হতো না।
আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেতন হঠাৎ করে চালু হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিরেকে বেতন ছাড় হয়। প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষক আছেন, ক’জন বেতন ছাড়া চিকিৎসা ছুটিতে, ক’জন আছে পদত্যাগ না করে বাড়িতে। বিদ্যালয়ে যায় না আরও অনেক আছেন, যাদের বেতন বিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করে না। যেমন অনুমতি ব্যাতিরেকে অনুপস্থিত থাকলে বা নৈমিত্তিক ছুট অতিরিক্ত হলে বেতন কাটা যায়, এরা তো বেতন পেয়ে গেছেন।
আমার প্রস্তাব হলো, উদ্ভিগ্ন শিক্ষকদের সমস্যার তড়িৎ সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়া। আর যাদের সংশোধনের প্রয়োজন আছে তাদের বেতন আপাততঃ আগের মত দিয়ে সময় দেয়া হোক। কারণ, আইডি সংশোধন বা এমপিও সংশোধন সময় সাপেক্ষ বিষয়। আর বর্তমানে সব বিদ্যালয়ে কমিটি নাই। কমিটি ছাড়া এ সংশোধন গুলো করা সম্ভব হবে না।
তাছাড়া আমাদের শিক্ষকবৃন্দের কাছে সবিনয় অনুরোধ, অনুমান নির্ভর একেক জনে একেক রকম লিখে শিক্ষকদেরকে হতাশায় ফেলবেন না। আপনি বেতন পেয়েছেন, ভালো কথা। আপনার একজন সহকর্মী বেতন পায় নাই, তার অবস্থা চিন্তা করেন। তাঁর পরিবার পরিজনের দায়িত্ব পালন নিয়ে ভাবেন তো। যদি কেউ ৪/৫ মাস বেতন না পায়, তখন তার কি অবস্থা হবে? তাই এগুলো সামাজিক মাধ্যমে না লিখে কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের অসুবিধায় পড়া সহকর্মীদের ব্যাপারে সহজ চিন্তা করার জন্য দাবী জানাই।
পরিশেষে আমাদের আকুল আবেদন কর্তৃপক্ষের নিকট ইএফটিতে বেতন দেন আমরা তার পক্ষে কিন্তু বর্তমান সমস্যাগুলো সমস্যার আলোকে সমাধান করেন। আর শিক্ষকদের বেতন যাতে বন্ধ না হয়, সেই দিকে নজর দিন। আর যাদের সমস্যা আছে তাদের বেতন বিকল্প চিন্তা করে নিয়মিত করণের উদ্যোগ নিন। এ ভাবে বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে কর্তৃপক্ষ বক্তব্য দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং যাদের সমস্যা আছে তাদের করণীয় প্রসঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ ও কর্তৃপক্ষের সহানুভূতি প্রত্যাশা করছি।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা, সিলেট।