স্কাউটিং হচ্ছে একটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। যেখানে থাকবে না রাজনীতি, থাকবে না কোন বিচ্ছিন্নতা। যেখানে একতাবদ্ধ হয়ে মিলে মিশে সমাজবদ্ধভাবে সংগঠন পরিচালনা করাই সার্থকতা।
স্কাউট (Scout) শব্দটাই তার সার্থকতার পরিচয় বহন করে। ইংরেজি Scout শব্দটার আক্ষরিক বিশ্লেষণ করলে S-তে: Smart (বুদ্ধিমান), C-তে: Clever (চালাক), O-তে: Obedient (বিশ্বস্ত/অনুগত), U-তে: Universal (একতাবদ্ধ) ও T-তে: Truthful (সত্যবাদী) শব্দগুলো বেরিয়ে আসে। যার মধ্য দিয়ে স্কাউটের আত্মস্বরূপ প্রকাশ পেয়ে যায়।
সাধারণত স্কাউটস বলতে বাংলাদেশ স্কাউটস-কে বুঝায়। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর অধীনস্ত একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক, অরাজনৈতিক, শিক্ষামূলক আন্দোলনের নাম স্কাউটস। সেই নিরিখে বাংলাদেশ স্কাউটস বিয়ানীবাজার উপজেলা পর্যায়ের সকল স্কাউটিং প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্কাউটের কার্যক্রম তদারকি করার কথা।
Π বাংলাদেশ স্কাউটস বিয়ানীবাজার উপজেলা পর্যায়ে যেসব সেবাসমূহ দেয়া হয়, তা হলো:-
*নতুন স্কাউট দল খোলা
*স্কাউটিং সংক্রান্ত বই, ব্যাজ সহ যাবতীয় সামগ্রী
*স্কাউটিং সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য
*স্কাউট প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক তথ্য
*প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিষয়ক তথ্য ও সহায়তা
*এডাল্ড লিডারদের অ্যাওয়ার্ড সুপারিশ প্রেরণসহ স্কাউটিং সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা প্রদান করা হয়।
Π ফি আদায়:
এসব ব্যয় নির্বাহের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠন ও নিয়মের ২১২ ধারা অনুযায়ী স্কাউট, স্কাউটার ও কমিশনারদের প্রদেয় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার সদস্য ফি, বার্ষিক রেজিষ্ট্রেশন ফি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অনুদান আদায়ের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু বিগত তিন বছর মেয়াদে এসব ফি আদায়ের ক্ষেত্রে উপজেলা কমিশনার আবুল হোসেন চৌধুরী যথাযথ দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্কাউটিং সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও উপজেলা কমিশনার উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের সমগ্র স্কুল-মাদ্রাসার সাথে সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে বিমাতৃসুলভ আচরণ প্রদর্শন করেছেন। ফলে স্কাউটিং সম্প্রসারণের স্থলে চলমান কার্যক্রম দিন দিন আরও সংকুচিত হয়েছে। কারণ, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্কাউটস কমিশনার আবুল হোসেন চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী বিগত সাড়ে তিন বছর মেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তাঁর দায়িত্বকালীন বিগত সাড়ে তিন বছর ব্যাপি বিয়ানীবাজার উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপজেলার স্কাউটস আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। ফলে এক তরফাভাবে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ২২-২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাপি ৪র্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরি শুরু করেন। এতে মাত্র ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০টি কাব ইউনিট এ ক্যাম্পুরিতে অংশগ্রহণ করে।
গত ১৮ জুলাই ২০২৪খ্রি. বাংলাদেশ স্কাউটস, বিয়ানীবাজার উপজেলার ১৩তম ত্রৈবর্ষিক কাউন্সিলে ৪র্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরি-২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘মুকুলিকা’ হাতে পেলাম। প্রকাশকাল- ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪খ্রি.। প্রচ্ছদ-সহ পৃষ্ঠা সংখ্যা- ২৬। এ মুকুলিকা’ সম্পাদনা করেন উডব্যাজার স্কাউটার মো.তাহির উদ্দিন। ‘মুকুলিকা’ নামের অর্থ-একটি ছোট পুষ্প। লিঙ্গ-মেয়ে, মূল- বাংলা, সংখ্যাতত্ত্ব-৯, রাশিচক্র সাইন- সিংহ রাশি, স্বর গণনা- ৪। কিন্ত কাবিং-তো করে বালক-বালিকা। তাই নামকরণ কি যথার্থ? সেটা না হয় পাঠকের জন্য রেখে দিলাম।
এদিকে প্রকাশিত ‘মুকুলিকা’র ১৮ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, ২০২০ সালের পর থেকে অর্থাৎ বিগত তিন বছরে অত্র উপজেলার কোন বালক/বালিকা ‘শাপলা কাড এওয়ার্ড’ কিংবা ‘প্রেসিডেন্ট স্কাউট এওয়ার্ড’ অর্জন তালিকায় নাম লিখাতে পারেনি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, স্কাউটিং ও কাবিং কার্যক্রম পরিচালনায় উপজেলা কমিশনারের দায়সারা মনোভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে স্কাউটিং সম্প্রসারণ আশানুরূপ সম্প্রসারিত না হওয়ায় বিয়ানীবাজার উপজেলা স্কাউটস তার গৌরবের গন্তব্য দিন দিন হারাতে চলছে। বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠন ও নিয়মের ২০০ ও ২৩৯(১) ধারা অনুযায়ী বিয়ানীবাজার স্কাউটস সংগঠনের উন্নয়ন এবং সেবাসমুহ বাস্তবায়নের স্বেচ্ছাচারিতায় উপজেলা কমিশনার পদের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ফলে প্রাথমিক স্তর থেকে নির্বাচিত স্কাউট কমিশনার’র নিয়ন্ত্রণাধীন তিন বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ পরবর্তী কাউন্সিলের স্বার্থে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-মাদ্রাসা ও প্রাথমিক স্তরের সিনিয়র শিক্ষক নেতৃবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই ২০২৪খ্রি. এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্কাউটের সম্মানজনক অবস্থান পুনরুদ্ধারে আলোচনার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে আসন্ন কাউন্সিলকে মিলনমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই মোতাবেক গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ স্কাউটস বিয়ানীবাজার উপজেলার ১৩তম ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের ১ম অধিবেশন সম্পন্ন হয়।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্কাউট সহসভাপতি খালেদ সাইফুদ্দিন জাফরী’র সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভাপতি নিজ উদ্যোগে ২০২৪-২০২৬খ্রি. মেয়াদের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত কাউন্সিলরদের সহযোগিতা চাইলে সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি সফর উদ্দিন আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করলে উপস্থিত সকলের সমর্থনে ও কাউন্সিলরদের সম্মতিক্রমে মাধ্যমিক স্তর থেকে বাশিস সভাপতি আব্দুদ দাইয়ান, সহসভাপতি মো: বেলাল আহমদ, যুগ্ম সচিব আতিকুল ইসলাম, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তর থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: সুলেমান আহমদ, সাধারন সম্পাদক বিমল পাল, প্রধান শিক্ষক কবির আহমদ ও মাদ্রাসা প্রতিনিধি লায়েব আলী-কে নিয়ে ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট সাবজেক্ট কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু নেতৃত্ব নির্বাচনের সাবজেক্ট কমিটির সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কাউন্সিল অধিবেশন মুলতবি করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠন ও নিয়মের ১৯২ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী কমিটির মুলতবি কাউন্সিল মেয়াদ আগামী ৭ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ অতিক্রম করলে ৩ মাসের জন্য এডহক কমিটি গঠনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
তাই নেতৃত্ব নির্বাচনে অমিমাংসিত অবস্থা নিরসনে নানা পন্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ স্কাউটস, বিয়ানীবাজার উপজেলা সভাপতি (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) নির্বাহী ক্ষমতাবলে গঠিত সাবজেক্ট কমিটির সদস্যবৃন্দ নিয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিংবা প্রয়োজনে স্কাউটস সম্প্রসারণের স্বার্থে উপজেলা কমিশনার পদটি মেয়াদান্তে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে রটেসনে বন্টন করে দিতে পারেন। তাতেও যদি সুরাহা না হয়, তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর ড্রপ দিয়ে তৃতীয় পন্থায়ও কমিশনার সুপারিশের সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। স্কাউটস, বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক, অরাজনৈতিক, শিক্ষামূলক আন্দোলন। এ আন্দোলন বাঁচতে বাংলাদেশ স্কাউটস বিয়ানীবাজার উপজেলা পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
Π নির্বাহী কমিটি: বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠন ও নিয়মের ১৯৪ ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে ৩ বছরের জন্য উপজেলা স্কাউটসের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।
কমিটিতে ১। সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (পদাধিকার বলে), ২। সহ-সভাপতি (অনধিক ৫ জন নির্বাচিত), ৩। উপজেলা স্কাউটস কমিশনার (কাউন্সিল কর্তৃক সুপারিশকৃত), 8। কোষাধ্যক্ষ: ১ জন নির্বাচিত, ৫। উপজেলা সহকারী কমিশনার (অনাধিক ৭ জন কমিশনার মনোনয়ন দিবেন, ৬। সম্পাদক (স্কাউট শাখা হতে), ৭। যুগ্ম-সম্পাদক (কাব শাখা হতে)
৮। উপজেলা স্কাউট লিডার: ১জন (কমিশনার কতৃক স্কাউট উডব্যাজার), ৯। উপজেলা কাব স্কাউট লিডার: ১জন (কমিশনার কতৃক কাব উডব্যাজার), ১০। এল.টি./ এ.এল.টি.: উপজেলার সকল এল.টি./ এ.এল.টি. (পদাধিকার বলে সদস্য), ১১। জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত বাংলাদেশ স্কাউটসের কর্মকর্তা: ১ জন (পদাধিকার বলে), ১২। উপজেলা শিক্ষা অফিসার/ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার: ২ জন (পদাধিকার বলে), ১৩। গ্রুপ কমিটির সভাপতি প্রতিনিধি: ৪ জন(প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২জন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ মাদ্রাসার ২ জন প্রধান শিক্ষক) ও ১৪। সহযোজিত সদস্য: ২ জন।
Π এডহক কমিটিতে ১। আহবায়ক: উপজেলা নির্বাহী অফিসার (পদাধিকার বলে), ২। সদস্য: সভাপতি মনোনীত ৫ জন স্কাউটার, জেলা স্কাউটের ১ জন প্রতিনিধি ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। ৩। সদস্য সচিব: উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
#লেখক পরিচিতি: প্রাক্তন সভাপতি- বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান-২০২৩, বিয়ানীবাজার উপজেলা।