পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক:
জাতীয় ঐক্যের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে স্বাক্ষরিত হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর করেন। বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানস্থলে আগে পৌঁছান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগ নেয়। ৬টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়। এই প্রস্তাবগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি করে জুলাই সনদের খসড়া, যা পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ মতামত ও রাজনৈতিক আলোচনা শেষে চূড়ান্ত করা হয়। গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোকে সনদের চূড়ান্ত কপি হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বীরের মর্যাদা দাবিতে অবস্থান নেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাদের আশ্বস্ত করে জানান, জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফায় তাদের স্বীকৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সূচিত হলো নতুন এক অধ্যায়। ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ কেবল একটি দলিল নয়, এটি জাতীয় ঐক্য, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।