— Π Faizul Chowdhury
২০২৪ সালের মে মাসে নিউইয়র্কস্থ আমার ছোট ছেলের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকেই আমার কিডনি জনিত সমস্যার কারণে ডায়ালাইসিস শুরু হয়, যা সপ্তাহে তিনদিন সাড়ে তিন ঘণ্টা করে চলতে থাকে ২০২৫ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ভোরে আমার ফোন বেজে উঠলো। সাধারণত এ সময় কেউ ফোন করে না, তাই কিছুটা বিস্মিত হয়ে ফোন ধরলাম। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হলো— “মন্টিফিওর হাসপাতালের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার থেকে বলছি, আপনার জন্য একটি কিডনি পাওয়া গেছে। কিডনি দাতার বয়স মধ্যবয়সী। আপনি গ্রহণে রাজি হলে দ্রুত সম্মতি দিয়ে হাসপাতালে রিপোর্ট করুন।” আমি সাথে সাথেই সম্মতি জানালাম।
আমার ছেলে ও ছেলের বউ এই খবর শুনে জেগে উঠলো। এরই মধ্যে ফজরের আজান হলো, আমরা নামাজ পড়ে প্রস্তুতি নিলাম। হাসপাতালে যাওয়ার আগে নিউইয়র্কের বন্ধু-আত্মীয়দের ফোন করিনি, কারণ তখনো ভোরবেলা। তবে লন্ডনে থাকা আমার ছোট ভাই নজমুলকে জানাই। আমার ছেলের বউ ফাতিমা হাসপাতালে আমার সঙ্গে গেলেন।
হাসপাতালে পৌঁছার পর দ্রুত রুম নির্ধারণ হলো এবং চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। বিকাল নাগাদ সব রিপোর্ট আমার অনুকূলে এলো। অন্য একটি স্টেট থেকে কিডনি এসে পৌঁছাল। সন্ধ্যা ছ’টার দিকে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চললো এবং রাত সাড়ে এগারোটায় আমাকে রিকভারি রুমে আনা হলো। ধীরে ধীরে চেতনা ফিরলো, আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আমাকে কক্ষান্তর করা হয়।
২১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকেরা আমার শারীরিক অগ্রগতি দেখে জানালেন, ২২ তারিখে আমাকে রিলিজ দেওয়া হবে। বর্তমানে আমি বাসায় আছি। পুরোপুরি সুস্থতার জন্য বিশ্রামে থাকতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাস পর অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ এবং এক বছর পর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করা যাবে।
আমার এ সফল কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে হাজারো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। একইসাথে আমার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী যারা দোয়া করেছেন তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সবাইকে বলবো— শরীরের যত্ন নিন, কারণ রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই শ্রেয়।