1. news@panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই : পঞ্চখণ্ড আই
  2. info@www.panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই :
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
ইতিবাচক চিন্তা : জাতির ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা নেপাল ও বাংলাদেশের সরকার পতনে মিল-অমিল ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল ও এজিএস ফেরদৌস বিয়ানীবাজারে সাঁতার প্রতিযোগিতায় গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ডাকসুর শত বছরের ইতিহাস: আন্দোলন, নেতৃত্ব ও উত্তরাধিকার Π আতাউর রহমান দারুল হাদিস লতিফিয়া মাদরাসার পক্ষ থেকে দুই ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা স্মারক প্রয়াত খলিলুর রহমান চৌধুরীর স্মরণে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ডাকসু নির্বাচন: অভিযোগ-উত্তেজনার মাঝেই শিবির সমর্থিত জোটের নিরঙ্কুশ জয় ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা: উপাচার্যকে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ আখ্যা ছাত্রদলের সিলেটে পাহাড় ও টিলা কাটায় কঠোর ব্যবস্থা: প্রকৃতি রক্ষায় প্রশাসনের নির্দেশ

ইতিবাচক চিন্তা : জাতির ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা

আতাউর রহমান | শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও সমাজচিন্তক
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

লেখক- Π আতাউর রহমান

মানুষের জীবন প্রকৃতির ফুলের মতো বহুমাত্রিক। সব ফুল সুগন্ধি নয়, কিন্তু কোনো ফুলই দুর্গন্ধও বিলায় না। জীবনও তেমনি—সবার জীবনে সফলতা, সুখ, সৌন্দর্য নাও থাকতে পারে, কিন্তু সেটি যেন দুর্গন্ধহীন হয়। অর্থাৎ জীবন যেন অন্যকে ক্ষতবিক্ষত না করে, পরিবেশকে দূষিত না করে, সমাজে কলুষ ছড়ায় না। জীবন তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা সুগন্ধি না হলেও অন্তত দুর্গন্ধহীন হতে পারে। বর্তমান বাংলাদেশে আমরা নানা সংকট, বৈষম্য ও হতাশার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এর মাঝেও যদি ইতিবাচক চিন্তা জাগ্রত করতে পারি, তবে আমাদের জাতীয় জীবনের পথ প্রশস্ত হবে।

✦ সুখের অভিনয় ও বাস্তবতার স্বীকারোক্তি

আজকের দিনে চারদিকে আমরা মানুষকে কষ্টে জর্জরিত হতে দেখি। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা সংকট, শিক্ষাব্যবস্থার অস্থিরতা—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও মানুষ বাইরে থেকে হাসিমুখে বলে, “ভালো আছি।” আসলে তারা ভালো নেই। এই ভান আমাদের সমাজকে এক ধরনের অচলায়তনে বেঁধে ফেলেছে। আমরা সমস্যাকে স্বীকার করি না, বরং ঢেকে রাখি। অথচ সমাধানের প্রথম শর্ত হলো সমস্যাকে স্বীকার করা। আমাদের উচিত হবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সমস্যার কথা খোলাখুলিভাবে বলা, রাষ্ট্র ও সমাজকে দায়বদ্ধ রাখা এবং সম্মিলিতভাবে সমাধান খোঁজা।

✦ কৃতজ্ঞতার রাজনীতি বনাম ফুলের মালা

বাংলাদেশে রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। যারা নির্বাচনে জিতে আসন দখল করেন, তারা ফুলের মালায় সিক্ত হন। কিন্তু যেসব সাধারণ মানুষ, ভোটার, মাঠকর্মী কিংবা নীরবে শ্রম দেওয়া নাগরিকরা তাদের জয় নিশ্চিত করেন—তাদের কথা দ্রুত ভুলে যাওয়া হয়। অথচ গণতন্ত্র টিকে থাকে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে।

এখানে আরেকটি বিষয় গভীরভাবে লক্ষণীয়—নির্বাচনকে ঘিরে চলমান বিতর্ক। নির্বাচন কেবল ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় নয়, বরং এটি জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যম। কিন্তু যখন ভোটাররা অবাধে ভোট দিতে পারে না, যখন ফলাফলকে ঘিরে স্বচ্ছতার প্রশ্ন ওঠে, তখন গণতন্ত্রের ফুলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির সুগন্ধি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে জয়-পরাজয়ের উর্ধ্বে জনগণের কণ্ঠস্বরই হবে আসল মালা।

✦ শ্রমের মর্যাদা ও বৈষম্যের প্রশ্ন

ঘোড়ার গাড়ি চলে ঘোড়ার শক্তির জোরে, কিন্তু রিকশা চলে মানুষের রক্ত-ঘামে। এই চিত্র আমাদের সমাজে শ্রমবিভাজন ও বৈষম্যের প্রতীক। উন্নয়ন নিয়ে যত আলোচনা হোক, শ্রমিকদের ঘাম ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না। আজকের বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিকদের রক্ত-ঘামে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তাদের ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত। ইতিবাচক সমাজ গড়তে হলে শ্রমকে মর্যাদা দিতে হবে, ন্যায্য ভাগ নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বৈষম্য আমাদের ভবিষ্যতের পথে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দেবে।

✦ মধ্যবিত্ত জীবনের উপন্যাস

আমাদের সমাজের সবচেয়ে অদ্ভুত চরিত্র মধ্যবিত্ত পরিবার। তাদের সন্তানদের জীবনই যেন একেকটি উপন্যাস। তারা প্রতিদিন সংগ্রাম করে, ত্যাগ স্বীকার করে, স্বপ্ন বোনে, আবার বাস্তবের সঙ্গে আপস করে। অথচ তাদের কোনো স্বস্তি নেই। ধনীদের মতো বিলাসিতা নেই, গরিবের মতো সহায়তার দাবি জানানোর সুযোগও নেই। তারা নিজেরাই নিজের জীবনের কাহিনি রচনা করে। সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী এই শ্রেণিকে মূল্যায়ন করা জরুরি। তাদের দুঃখ-কষ্টকে উপেক্ষা করা মানে সমাজের স্থিতি নষ্ট করা। ইতিবাচক রাষ্ট্রচিন্তার অংশ হিসেবে মধ্যবিত্তকে রাষ্ট্রীয় নীতি ও সেবার অগ্রাধিকার দিতে হবে।

✦ নেতিবাচক মানসিকতা ও মব ভায়োলেন্স

একটি নিমগাছের গোড়ায় যতই বস্তা বস্তা চিনি ছড়ানো হোক, তার ফল কখনো মিষ্টি হয় না। কারণ এর মৌল চরিত্র তেতো। একইভাবে যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের মানসিকতায় নেতিবাচকতা থেকে যায়—হিংসা, প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি—তাহলে যত উন্নয়ন প্রকল্পই নেওয়া হোক, ফলাফল ইতিবাচক হবে না।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্রে মব ভায়োলেন্স (গণপিটুনি, জনরোষ) একটি গুরুতর নেতিবাচক প্রবণতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সন্দেহভাজনকে আইনের হাতে না তুলে দিয়ে জনগণ নিজেরাই বিচার করছে। এটি কেবল আইন-শৃঙ্খলার দুর্বলতাকেই প্রকাশ করছে না, বরং জাতির মানসিকতার ভেতরে নেতিবাচকতার গভীর শেকড়কেও সামনে আনছে। ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হলে জনগণকে আইনের ওপর আস্থা রাখতে শেখাতে হবে, বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নইলে সমাজ ক্রমে হিংস্র হয়ে উঠবে এবং উন্নয়নের সব অর্জন অর্থহীন হয়ে পড়বে।

✦ ইতিবাচক মানসিকতার প্রয়োজনীয়তা

ইতিবাচক মানসিকতা মানে সমস্যাকে স্বীকার করা, সমাধানের পথ খোঁজা, শ্রমকে মর্যাদা দেওয়া, জনগণকে সম্মান করা, বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা এবং ভবিষ্যতের দিকে আশাবাদী দৃষ্টি রাখা। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন যেমন সুগন্ধি না হলেও অন্তত দুর্গন্ধহীন হতে পারে, তেমনি জাতীয় জীবনেও ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রতিটি নাগরিক যদি ন্যায়ের পথে চলে, প্রতিটি নেতা যদি জনগণকে সম্মান করে, প্রতিটি শ্রমিক যদি প্রাপ্য মর্যাদা পায়—তাহলে দেশ সুগন্ধি ফুলের মতো সুবাস ছড়াবে।

✦ উপসংহার

বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির অনেক সূচক অর্জিত হলেও সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক সংকট, নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস, আইনহীনতার সংস্কৃতি এবং মব ভায়োলেন্স আমাদের ভবিষ্যতের পথে বড় বাধা। এখন সময় এসেছে ইতিবাচক চিন্তা ও কর্মে সমৃদ্ধ হওয়ার। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবার ক্ষেত্রেই দুর্গন্ধহীন ফুলের মতো জীবনযাপন করতে হবে। তাহলেই আমাদের প্রজন্মের জন্য একটি সুগন্ধি ও আলোকিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব হবে।

Leave a Reply

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট