পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদন :
স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেছেন ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এতে ঘোষণা করা হয়, ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে গৃহীত নতুন সংবিধানে এ ঘোষণাপত্র তফসিল হিসেবে সংযুক্ত থাকবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকার অস্থায়ী রাষ্ট্রীয় সম্মেলন কেন্দ্রে এক আনুষ্ঠানিক আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
● অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানের অভ্যুত্থান
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে একটি ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, “এই জনগণই ১৯৭১-এ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, ১৯৯০-এ স্বৈরাচার হটিয়েছে এবং ২০২৪-এ আবার ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করেছে।”
এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে একচ্ছত্র দলীয় শাসন ও সাংবিধানিক বিকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার বিরুদ্ধে জনগণ ধারাবাহিক আন্দোলন করেছে।
● নির্যাতন, গুম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য
ঘোষণাপত্রে অভিযোগ করা হয়, বিগত সরকারের আমলে “গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়ীকরণ ও ধ্বংসের” ঘটনা ঘটেছে। তরুণদের ওপর বৈষম্য, কোটা ব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং দমন-পীড়নের অভিযোগের কারণে ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যা পরিণত হয় জন-অভ্যুত্থানে।
উল্লেখ করা হয়, “৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত ধাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন এবং দেশত্যাগ করেন।”
● অন্তর্বর্তী সরকারের পথরেখা
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার কাজ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশিত নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
“জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগের প্রতীক এই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নৈতিক দলিল হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমেই আমরা অতীতের ভুল শুধরে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্ত করতে চাই।”
● সামগ্রিক প্রতিশ্রুতি
ঘোষণাপত্রে ঘোষিত অভিপ্রায়সমূহের মধ্যে রয়েছে—
➤ ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া
➤ শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা
➤ গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
➤ দুর্নীতি ও বৈষম্যবিরোধী সংস্কার
➤ জলবায়ু ও পরিবেশ-সহিষ্ণু টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা
➤ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন
➤ মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
প্রধান উপদেষ্টা শেষ বক্তব্যে বলেন,
“এই দলিল হচ্ছে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আমরা বিশ্বাস করি, এই জনগণের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে একটি মূল্যবোধভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ।”