✍️ পঞ্চখণ্ড আই পোর্টাল প্রতিবেদন
“এক–দুই–তিন–চার, আসিফ তুই গদি ছাড়!”
“বাপে ছেলে মিল্লা, মুরাদনগর খাইছে গিল্লা!”
এই স্লোগানগুলো আর কেবল ক্ষণিকের প্রতিবাদ নয়—এগুলো হয়ে উঠেছে একটি উপজেলার জমানো ক্ষোভ, বঞ্চনার ভাষ্য ও গণবিস্ফোরণের শব্দচিত্র।
২৯ জুলাই, মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরে হাজারো ছাত্র-জনতা যখন স্লোগানে মুখরিত করছিল চারপাশ, তখন দেশ দেখলো আরেকটি প্রতীকী প্রতিরোধ—ক্ষমতার অন্ধকার চক্রের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা একটি জনগোষ্ঠীর মুখর বাস্তবতা।
● উপদেষ্টা না উপনিয়ন্ত্রক?
ঘটনার মূল কেন্দ্রে রয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া—তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক, নৈতিক এবং সাংবিধানিক বোধের পরিপন্থীও। ছাত্রদের ভাষায়, “উপদেষ্টার ভূমিকায় থাকলেও, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে তিনি হয়ে উঠেছেন এক উপনিয়ন্ত্রক।”
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁর ছত্রছায়ায় ঘটে যাচ্ছে-আকুবপুরে ট্রিপল মার্ডার, স্কুল শিক্ষিকা গীতা রাণী রায়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুকুর দখল, বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি, এবং স্থানীয় মাদ্রাসা–স্কুল–কলেজে ভয়ভীতির সংস্কৃতি সৃষ্টি।
এসব ঘটনার জেরে মুরাদনগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ একত্র হয়ে যে বিক্ষোভ মিছিল করেছে, তা কেবল একটি ঘটনার প্রতিবাদ নয়—বরং এক বৃহৎ ‘চক্রতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা।
● শিক্ষকের পোশাকে ‘গডফাদার’?
উপদেষ্টার বাবা সম্পর্কে ছাত্রদলের সভাপতি খায়রুল আহসান বলেন,
“একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক কীভাবে কোটি টাকার গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়? কোন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী উনি? তার দখলবাজির ভিডিও প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।”
বিক্ষোভকারীদের মতে, শুধু রাজনীতি নয়, প্রশাসনিক স্তরেও প্রভাব খাটিয়ে তিনি মুরাদনগরে এক ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করেছেন। অভিযোগ আছে—আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকেও বিএনপিপন্থীদের জেলে পাঠানো, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং জনমনে ভয় সৃষ্টি করাই এই চক্রের প্রধান কৌশল।
● পূজামণ্ডপে হামলা, সংখ্যালঘুদের ত্রাস
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি দুলাল দেবনাথ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমাদের তিনটি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে, একজন হিন্দু শিক্ষিকাকে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছে, yet বিচার পাইনি। আসিফ মাহমুদের পরিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে।”
● নেতৃত্ব নয়, একচ্ছত্র দখল
ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে উঠে আসে আরেক ভয়াবহ চিত্র:
“আসিফ মাহমুদের বাবা আজও ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ভূতের মতো রাজনীতি চালাচ্ছেন, আর আসিফ নিজে ফ্যাসিবাদী চক্রের নেতৃত্বে গুম, হুমকি, চাঁদাবাজি আর ভয়ভীতি ছড়াচ্ছেন।”
বিএনপির অন্যতম নেতা শাহ আলমকে “কালো গাড়ি দিয়ে” উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আবারো প্রশ্ন তোলে—মুরাদনগরে আসল শাসক কে?
● প্রতিবেদনের শেষ প্রশ্নচিহ্ন
একজন উপদেষ্টার নামধারী, নির্বাচিত নন, অথচ তার পরিবার ক্ষমতার প্রতিটি সিঁড়িতে আধিপত্য করছে—এটা কী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা নয়?
গণবিক্ষোভের ভাষা স্পষ্ট:
“বাপে পুতে মিল্লা, দেশটা খাইসে গিল্লা!”
এই শ্লোগান আসলে শুধুমাত্র আসিফ বা তার বাবার জন্য নয়—এটি দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ‘ছায়া রাজনীতিক’দের প্রতিকৃতির বিরুদ্ধে এক প্রকার সামাজিক চার্জশিট। এখন প্রশ্ন—এই গণচেতনার ভাষা আমরা কি শুনব? নাকি চোখ বুজে রেখে অন্ধকারের মঞ্চে দেশটাকে সমর্পণ করে যাব?
(🔸প্রতিবেদকের মন্তব্য: এই প্রতিবেদনেটি ভুক্তভোগী জনতার বক্তব্য ও সংবাদ তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে অনুসন্ধানী বিশ্লেষণে রচিত। ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়বিচারের পক্ষেই এই লেখা।)