✍️ বিশেষ প্রতিবেদন:
জুলাই আন্দোলনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমূল বদলে গেছে। সেই ঢেউ লেগেছে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনেও। এক সময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনী এলাকা এখন আওয়ামীলীগ-বিহীন রাজনীতির নতুন মঞ্চে রূপ নিচ্ছে। চিত্র বদলেছে দৃশ্যত। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক তৎপরতা এখন রীতিমত দৃষ্টিগোচর এবং গতিশীল।
গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী শাসনের সময় এই এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল সীমিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ বর্তমানে দলীয় কার্যালয়গুলো খুলে গেছে, নেতাকর্মীরা মাঠে-ময়দানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচিতে। নির্বাচনি মাঠে গতি এনেছেন বিশেষ করে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
লন্ডনের বৈঠকে সম্ভাব্য নির্বাচনি সময়সূচি নির্ধারণ হওয়ায়, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পড়েছেন ঘুমহীন উদ্বেগে। একদিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজেদের প্রমাণের চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে জনগণের আস্থা অর্জনের লড়াই—সব মিলিয়ে এক কঠিন পরীক্ষা চলছে এখন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এই আসনে যাঁদের নাম বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন— বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, ২০১৮ সালের ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, জাসাসের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, চিত্রনায়ক হেলাল খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রয়াত সভাপতি কমর উদ্দিন আহমদের মেয়ে সাবিনা খান পপি, সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা অহিদ উদ্দিন, জেলা বিএনপি নেতা তামিম ইয়াহিয়া হক।
এসব নেতার দলীয় উপস্থিতি, স্থানীয় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা ও জনসম্পৃক্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। ভিডিও কনটেন্ট, কর্মসূচি ও ব্যক্তিগত উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।
এবারের নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে। ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও বিতর্কহীন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে চায় দলটি। আন্দোলনকালীন ভূমিকা, জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং বিজয়ের সম্ভাব্যতা—এই তিনটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোর আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতের বিজয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতা এখন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে না গিয়ে দলীয় জনপ্রিয়তার দৌড়ে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ রেজা ও সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন বলেন,
“সাধারণ মানুষ বহু বছর ভোট দিতে পারেনি। আগামীতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে—এমন আশায় সবাই অপেক্ষায়। দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন, কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি নেই। প্রার্থী ঘোষণা হলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।”
তাঁরা আরও জানান, বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে এবং জনগণের দাবির ভিত্তিতেই দলীয় সিদ্ধান্ত আসবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল বলেন,
“সিলেট-৬ আসনে বিএনপি এখন অতীত নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য সংগঠিত হচ্ছে। এককভাবে নয়, দলীয় ঐক্য, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এই রাজনৈতিক পালাবদল শুধু এই আসন লাভের জন্য নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশনা হয়ে দেখা দেবে।”