—শ্রদ্ধা নিবন্ধ | আতাউর রহমান
২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার—যেদিন রাজধানীর আকাশে আগুন জ্বলেছিল, মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছিল ধোঁয়া, কান্না, চিৎকার—সেদিনই ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেল এক নারীর মহৎ আত্মত্যাগের কাহিনি। শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী, যিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন, জীবনের চরম মুহূর্তে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে আগুনের ছোবল থেকে উদ্ধার করে নিজে শহিদ হন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভবনে আগুন লেগে যায়। আতঙ্কিত শিশুরা ছুটাছুটি করছিল, কেউ জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ছিল, কেউ দরজা খুঁজে পাচ্ছিল না। আর তখনই মাহেরীন চৌধুরী দাঁড়ালেন আশ্রয় হয়ে, আলো হয়ে। একে একে শিক্ষার্থীদের বের করে দিতে দিতে তিনি নিজে আর বের হতে পারেননি।
● মৃত্যুর মধ্যেও জীবন জাগালেন
তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয় সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায়, নিথর এক বিসর্জনের প্রতীক হয়ে। কিন্তু মাহেরীন চৌধুরী মরে যাননি। তিনি বেঁচে আছেন সেই শিশুদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে, যারা আজও ভয় পেয়ে কেঁদে উঠে বলে, “আম্মু, সেদিন আমাদের ম্যাম আমাকে হাত ধরে বের করে দিয়েছিলেন।”
● শিক্ষকের সংজ্ঞা নতুন করে লিখলেন তিনি
শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর এ আত্মত্যাগ একটি জাতির কাছে শুধু শোকের নয়, গৌরবেরও বিষয়। একজন শিক্ষক কীভাবে নিজের দায়িত্বের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দাঁড়ান, কীভাবে মাতৃত্ব, মানবতা ও মমতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠেন—তার নিদর্শন হয়ে রইলেন তিনি।
এই মৃত্যু শুধুই শোক নয়, এটি স্মরণযোগ্য শিক্ষা। রাষ্ট্র, সমাজ, এবং শিক্ষকতাকে যারা পেশা মনে করে তাদের জন্য এই মৃত্যু একটি জ্যোতির্ময় নৈতিক মাইলফলক।
● প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির
আমরা আহ্বান জানাই—শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হোক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তাঁর নামে গড়ে উঠুক একটি বৃত্তি, একটি ভবন, একটি মানবিক দায়িত্ববোধের প্রতীক। আগামী প্রজন্ম তাঁর আত্মত্যাগ থেকে শিখুক সাহস, দায়িত্ব আর ভালোবাসার পাঠ।
মাহেরীন চৌধুরী নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর সেই মহত্ত্বের মুহূর্ত।
যে মুহূর্তে একজন শিক্ষিকা হয়ে উঠেছিলেন জননীর মতো।
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা—এই মহান আত্মার প্রতি।