পঞ্চখণ্ড আই রিপোর্ট: আতাউর রহমান
রাজধানীর উত্তরা আজ (২১ জুলাই, সোমবার) এক বিভীষিকাময় দুপুর প্রত্যক্ষ করল—যেখানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়ে ১৯ জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
Π ঘটনার বিস্তারিত
দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। মাত্র ১২ মিনিট পর, ১টা ১৮ মিনিটে, দিয়াবাড়ির ব্যস্ত এলাকায় মাইলস্টোন কলেজের ভবনের প্রবেশমুখে ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়। তখন ক্লাস চলছিল। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পরপরই আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর, বিমানটির একমাত্র পাইলট, লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
Π জাতীয় বার্ন ইউনিটে হাহাকার
দগ্ধ ও আহত ৬০ জনকে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। স্বজনদের কান্না, চিকিৎসকদের ছুটে চলা এবং আহতদের আর্তনাদে হাসপাতাল চত্বরে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
Π একটি দীর্ঘতর তালিকায় আরেকটি নাম
বাংলাদেশে এর আগেও ১৫টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার অনেকগুলো প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় সংঘটিত। উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট: এফ-২৭ বিমানের দুর্ঘটনায় প্রথম নারী পাইলট কানিজ ফাতিমাসহ ৪৯ জন নিহত।
১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর: বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার ও স্কোয়াড্রন লিডার মফিজুল হক উদ্বোধনী ফ্লাইটেই মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৯ সালে ইউএস-বাংলার দুর্ঘটনা: নেপালে বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ জন নিহত, এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বেদনাদায়ক ঘটনা।
Π কেন এমন হচ্ছে? প্রশ্ন কাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশিক্ষণ বিমানের বারবার দুর্ঘটনা কাঠামোগত দুর্বলতার দিক নির্দেশ করে। বিশ্বজুড়েই প্রশিক্ষণ বিমানের ঝুঁকি বেশি হলেও, বারবার একই ধরনের দুর্ঘটনা কোনো এক অদৃশ্য গাফিলতির আভাস দেয়।
Π জনমনে উদ্বেগ, সংশ্লিষ্ট মহলে তৎপরতা দাবি
এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা প্রস্তুত আমাদের আকাশপথ ব্যবস্থাপনা?
বিমান বাহিনীর গৌরব ধরে রাখতে এবং আরও উন্নত ও নিরাপদ প্রশিক্ষণ অবকাঠামো গড়ে তুলতে এখনই সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উত্তরার আকাশে যে বিমানের আগুন লেলিহান শিখা হয়ে জ্বলল, তা যেন কেবল একটি যান্ত্রিক দুর্ঘটনা নয়—তা যেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা সংস্কৃতির প্রতি এক কঠিন প্রশ্ন। যারা হারিয়ে গেল, তারা ফিরে আসবে না, তবে তাদের স্মৃতি যেন আমাদের আকাশপথকে আরও নিরাপদ করার শপথে রূপ নেয়।