✍️ আতাউর রহমান :
জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে নতুন নতুন আলোচনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক একটি আলোচিত প্রসঙ্গ হলো প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অনুযায়ী সংসদে আসন বণ্টন হবে রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। অর্থাৎ একটি দল সরাসরি কোনো আসনে না জিতলেও, যদি জাতীয়ভাবে ৩০% ভোট পায়, তবে তারা ৩০% আসন পেতে পারে।
এ ধরনের পদ্ধতি ইউরোপসহ কিছু দেশে ব্যবহার হয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে অধিকাংশ ভোটার এই পদ্ধতির নামও শোনেননি, সেখানে হঠাৎ করে এটি চালুর প্রস্তাব কেন?
দেশের ৯০% জনগণেরই এই পদ্ধতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। তাছাড়া এই পদ্ধতি কখন, কীভাবে কার্যকর হবে—তা নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকেও নেই কোনো স্পষ্টতা। এমন একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব যখন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সামনে আসে, তখন সেটিকে জনস্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল বলেই মনে হয়।
ইন্টারিম সরকারের দায়িত্বপালনের মেয়াদও এখনো অস্পষ্ট। তবুও দেশের মানুষ আশায় ছিল যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন পিআর পদ্ধতি নিয়ে যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা এই নির্বাচনী সময়সূচি নিয়েই নতুন করে সংশয় তৈরি করছে।
নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনগণকে বাদ দিয়ে, তাদের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে দরকার গণশুনানি, প্রচার, প্রশিক্ষণ—প্রয়োজনে গণভোট। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাতারাতি নেওয়া যায় না।
এক সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, “I’ll make politics very difficult for the politicians of Bangladesh.” কথাটি হয়তো কৌতুকবোধ থেকে বলা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা হলো—আজ রাজনীতি সত্যিই সাধারণ নাগরিকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। আর প্রতিবার নির্বাচন এলেই যদি নতুন নতুন কৌশল ও জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ রাজনীতি ও ভোটের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
গণতন্ত্রের মূল শক্তি হলো স্বচ্ছতা, সময়মতো নির্বাচন ও জনসম্পৃক্ততা। নতুন কোনো পদ্ধতি বা সংস্কার তখনই সফল হয়, যখন জনগণ সেটি সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
সংক্ষিপ্তভাবে বললে—পিআর পদ্ধতি প্রয়োগযোগ্য কি-না, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে সময়োপযোগী, পরিকল্পিত ও জনসম্পৃক্ত প্রক্রিয়ায়। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে এটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার জন্য হুমকি।