“আমি এমন একজনকেও চিনি”
-Π আতাউর রহমান
আমি এমন একজনকেও চিনি—
লাখ টাকার খাটে শুয়ে ঘুমাতে পারে না,
ডিপ্রেশনের অন্ধ গলিতে হারায়,
সিগারেটের ধোঁয়ায় লিখে তার দুঃখের ডায়েরি।
আর চিনি ষাট বছরি এক ফেরিওয়ালাকে—
দিনভর গ্রামে গ্রামে পণ্য বিক্রি শেষে রাতে শুয়ে
ঘুমায় পাথরের মতো, নিঃশব্দ সুখে।
আমি চিনি—
একজন-কে যে ফিটনেস আসক্তিতে
জিমে গিয়ে ঘাম ঝরায় হাজার টাকায়।
আর এদিকে মাটিকাটা শ্রমিক অভাব গিলে খায়
আর তার শরীর হয়ে যায় অলৌকিক ভাস্কর্য!
আমি চিনি—
তাকে-ও যে মুড়ি খেয়েও মোটা হয়ে যায়,
আর কেউ জগৎ খেয়েও কঙ্কাল থাকে !
সুখের সংজ্ঞায় ভিন্নতা আছে—
কেউ পেয়ে কাঁদে, কেউ না পেয়ে।
আমি চিনি—
একজনকে যে শুকনা মুড়ি খেয়ে ডায়েটিং করে,
আর এদিকে বস্তির বুয়ার মেয়ে—
অভাবে খেতে না পেয়ে রোগা হয়ে যায়।
আমি চিনি—
একজনকে, যিনি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সকালে দৌড়ান,
আর এক যুবক দৌড়ায়—
বেঁচে থাকার জন্য, চাকরির আশায়,
দু’জনেরই ঘাম ঝরে, তবে লক্ষ্য আলাদা।
আমি চিনি সেই গল্পকেও—
রাজার অসুখ, আর জামাহীন সুখী মানুষের কাহিনি,
যে শিখিয়েছে— সবকিছু থাকলে সুখ হয় না,
আর কিছু না থাকলেও সুখ জেগে থাকতে পারে।
তাই তো বলি—
আমি এমন মানুষকেও চিনি,
যার পকেটে টাকা আছে, তবুও অভাবের ভিতরে বাঁচে।
আর চিনি তাকেও—
যার কিচ্ছু নেই, তবুও সে ‘আছে’ বলে বাঁচে।
#ভূমিকা:
আমরা সবাই ছুটছি—কেউ আরাম পেতে, কেউ নিরাপত্তা, কেউ শান্তি, কেউ কিছু না কিছু হারিয়ে ফেরত পেতে। অথচ জীবনের অদ্ভুত সমীকরণগুলো আমাদের শিখিয়ে দেয়, সুখ নির্ভর করে না বস্তু বা অবস্থানের উপর, বরং দৃষ্টিভঙ্গি, উপলব্ধি আর হৃদয়ের প্রশান্তির উপর। কারো ঘরে সব কিছু থাকলেও ঘুম নেই, কারো কাছে কিছুই নেই, তবুও সে স্বপ্ন দেখে। এই বৈপরীত্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের আসল পাঠ—সবাই নিজ নিজ যুদ্ধেই ব্যস্ত, যার রূপ আর মূল্য একেক জনের কাছে একেক রকম। এই ভাবনা থেকেই লেখা কবিতাটি।