আতাউর রহমান : এই বিয়ানীবাজার আমাদের। এই মাটি আমাদের ঐতিহ্যের মূলধন। আর আপনারা যারা রাজনীতি করেন, মানুষের মানোন্নয়নের কথা ভাবেন, সেটা আপনাদের রাজনীতির দর্শন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসবের টানাটানিতে নেই। আজ ১৫ আগস্ট শোক দিবস (যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সরকারি ছুটি বাতিল করেছে) কেন্দ্রিক ইস্যুতে গত দু’দিন ধরে বিয়ানীবাজারে পাল্টাপাল্টি মিছিল-মহড়ায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। সকলেই স্বস্তি চায়, শান্তি চায়। এ মাটির সম্প্রীতি অনেক পুরোনো। এখানে রাজনীতি দূর অতীতেও ছিল, এখনও আছে। সময়ের পালাক্রমে মৌসুমে মৌসুমে রাজনীতি রঙ বদলায়, কিন্তু আমরা বিয়ানীবাজারবাসী শান্তির বৃত্তে বাস করতে চাই। কারণ, দিন শেষে আমরা সকলেই একই বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা। তাই মাঠের সকল রাজনৈতিক দলের কাণ্ডারী ব্যক্তিদের প্রতি শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে উদাত্ত আহবান, এই শান্ত বিয়ানীবাজারকে অশান্ত করবেন না। কারণ, এই মাটি ও মানুষ আপনাদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিয়ানীবাজার উপজেলায় আন্দোলন কেন্দ্রিক কোন টু-শব্দ পর্যন্ত শোনা যায় নি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের বিজয়োল্লাসের বাঁধভাঙা স্রোত সারা দিনভর দেখেছি। আনন্দোল্লাস বিঘ্নিত না হোক। স্থায়িত্ব লাভ করুক।
এই আনন্দোল্লাসের শেষ দিকে উপজেলা প্রশাসন ভবন ও থানা ভবন নাশকতা ও লুটপাটের শিকার হয়। নিহত-আহতের ঘটনাও ঘটে। এসব ক্ষয়ক্ষতি সর্বসাকুল্যে আমাদের। আমাদেরকেই এসব রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেখাতে হবে যে, এই ঐতিহ্য আমাদের উত্তরাধিকার।
চাহিদার দিক থেকে জীবনের জন্য মানুষের অনেক কিছুই প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছুর আগমন ঘটলে তা বিষের মায়াজ্বালে পরিণত হয়। এ বিষ হতে পারে ক্ষমতা, সম্পদ, ক্ষুধা, অহংকার, লোভ, অলসতা, ভালবাসা, উচ্চাকাংক্ষা, ঘৃণা বা যে কোন কিছু।
এ অতিরিক্ত বিষগুলোই সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ। ফলে একে অপরের উপর নানা রকম অবিচারেল হয়, মানুষে মানুষে ক্লেশ হয় ও বিশৃঙ্খলার উন্মেষ ঘটে। আর এসবের মূলে হিংসা, ক্রোধ, লোভ, নিষ্ঠুরতা, অহঙ্কারই দায়ী।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মধ্যে যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ হয়ে যায়, তখনই দম্ভ, জিদ, অহংকার মানুষের এমনিতেই বেড়ে যায়। আর তা অবশেষে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও বাধায়। এ জাতীয় কাজগুলো- জুলুম। এর পরিণাম ভয়াবহ হয়। কারণ, জুলুম একটি অন্যায় কাজ। যার শাস্তি ইহকালেই শুরু হয়ে যায়। যা সকলেরই জানা।
আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা পিঁপড়ার কাছ থেকে শৃঙ্খলা শিখি না। কাকের কাছ থেকে একতা শিখি না। কুকুরের কাছ থেকে বিশ্বস্ততার শিক্ষা অর্জন করি না। কবুতরের কাছ থেকে স্বচ্ছতা শিখি না। ঘোড়ার কাছ থেকে পরিশ্রম করা শিখি না। মৌমাছির কাছ থেকে সাম্যতা শিখি না। যদি শিখতাম, তাহলে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে দুনিয়া জুড়ে নির্যাতনের এমন ভয়ংকর প্রতিযোগিতা হতো না। চারদিকে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার হতো না। কিন্তু এসব অত্যাচারের পরিণতি খুব ভালো হয় না। যারা অন্যের উপর অন্যায়ভাবে অবিচার করে, তারা নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে। যেমনটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেই নিরিখে মানুষে মানুষে বিভেদ হয় ও বিভিন্ন বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয়। এসবের মূল হচ্ছে নির্যাতন-জুলুম। নির্যাতন আর্থিক, কায়িক কিংবা মানসিক হতে পারে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। আর তা হলো- জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি (তিরমিযী, হাদিস ২৫১১)।
তাই আসুন, মোমবাতির ক্ষণিকের আলোর চেয়ে সূর্য নামক বিবেকের আলো দিয়ে জীবন গড়ি। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে শান্তির বন্ধন হিসেবে বিনির্মান করি। আল্লাহ সহায় হোন। আমিন।