
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাইবার নিরাপত্তা জোরদার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিমকার্ড ব্যবহারের অপব্যবহার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) থেকে প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহারের সীমা কার্যকর হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত সিম বন্ধের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তত ৫০ লাখ সিমকার্ড আজ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।
বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, যেসব গ্রাহকের নামে ১০টির বেশি সক্রিয় সিম রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো আজ থেকেই বন্ধ করতে হবে। এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধ, প্রতারণা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সিম বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান প্রতিফলিত হচ্ছে। সংস্থাটি আগামী বছর গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা আরও কমিয়ে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনাও নিয়েছে।
অক্টোবর মাসে প্রকাশিত বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটি ৫৯ লাখ, রবি আজিয়াটার ৫ কোটি ৭৫ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৭৯ লাখ এবং টেলিটকের ৬৬ লাখ ৭০ হাজার।
বিটিআরসির হিসাবে দেশে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা ২৬ কোটি ৬৩ লাখ, যার মধ্যে সক্রিয় সিম প্রায় ১৯ কোটি। আগস্ট পর্যন্ত ৬৭ লাখ ব্যক্তির নামে ১০টির বেশি সিম ছিল; এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ সিম গ্রাহক নিজেরাই বাতিল করেছেন। বাকি ৫০-৫৩ লাখ সিম আজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা তিন মাস সময় দিয়েছিলাম সিম ডি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য। যারা এটি করেননি, তাদের অতিরিক্ত সিম আজ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
বিশ্বে সক্রিয় মোবাইল সিম ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীনে সবচেয়ে বেশি ১৬১ কোটি সিম ব্যবহার হয়, এরপর ভারতে ১৫১ কোটি, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৮ কোটি ৫৫ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮ কোটি এবং বাংলাদেশে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে দেশে ১২ কোটি ৬৩ লাখ এনআইডি ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ কোটি ৪৮ লাখ এনআইডির বিপরীতে রয়েছে ২৬ কোটিরও বেশি সিম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রামীণ পর্যায়ে অসচেতনতা, ১৮ বছরের নিচে মোবাইল ব্যবহার এবং অপারেটরদের অতিরিক্ত অফার প্রদানের কারণে সিমের সংখ্যা এত বেড়েছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহক সচেতনতা বাড়াতে এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।