পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশেষ ভাড়া করা চার্টার্ড উড়োজাহাজটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফেরত পাঠানোদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন।
বিমানবন্দরের প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উড়োজাহাজ অবতরণের পর যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। রানওয়ে থেকে এরাইভাল লাউঞ্জ পর্যন্ত শিকল পরা অবস্থাতেই তাদের নিয়ে আসা হয়। পরে লাউঞ্জে পৌঁছানোর আগেই সবাইকে মুক্ত করা হয়।
এই সময় বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বাধা দেন।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ফেরত আসাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ যাত্রা ও শিকলে থাকার কারণে ফেরত আসা ব্যক্তিরা ছিলেন চরম বিধ্বস্ত। নোয়াখালীর তরুণ আব্দুল্লাহ হতাশা প্রকাশ করে বলেন,
“দেশে ফেরত আসার কষ্টের সঙ্গে টেরোরিস্টের মতো শিকল পরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ। এমন পরিস্থিতি আর কারও যেন না হয়—এই কামনা করি।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই একাধিক দফায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শুধু চলতি বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ফেরত আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পুরো সময় হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল। টয়লেটে যাওয়ার সময়ও কর্মকর্তা পাহারা দিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার শিকলসহ আসনে ফিরিয়ে আনা হয়। খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল কেবল রুটি ও পানি।
এর আগে ২ আগস্ট সামরিক উড়োজাহাজ সি-১৭ করে ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তখনও সবার হাত-পায়ে শিকল ছিল। ৮ জুন আরও একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন ফেরত আসেন। এছাড়া ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে কমপক্ষে ৩৪ জন বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়েছিল।
মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।