✍️ আতাউর রহমান:
বাংলাদেশের ইতিহাসে আগস্ট মানেই কেবল একটি ক্যালেন্ডারের পাতা নয়—বরং এক গভীর শোক, রক্তক্ষরণ, রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কষ্টদায়ক স্মারক, প্রতারণার প্রতিচ্ছবি এবং অব্যাহত প্রতিরোধের এক রক্তমাখা প্রতীক।
সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, আগস্ট ততই আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আত্মজিজ্ঞাসার আয়না। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পেয়েছে এক দুঃস্বপ্নের রাষ্ট্রযাত্রা, যে যাত্রার প্রতিটি বাঁকে ছিল ইতিহাস বিকৃতি, গণতন্ত্রহীনতা, ও সাংবিধানিক অবক্ষয়।
▣ ইতিহাসের নির্মমতম দিন: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট—জাতির জীবনে এক গভীরতম শোকের দিন। সেদিন রাতে ঘাতকরা শুধু রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেনি—তারা হত্যা করেছিল একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে। বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র রাসেল, তাঁর সহধর্মিণী, পুত্রবধূসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
শুরু হয়েছিল এক দীর্ঘ অন্ধকার অধ্যায়—রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাস বদলের নির্মম প্রয়াস।
▣ প্রশ্ন তো থেকেই যায়:
আমরা কি আজও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছি?
আমরা কি ঘাতকদের বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছি?
আমরা কি নতুন প্রজন্মকে আগস্টের সত্যিকারের ইতিহাস জানাতে পারছি?
▣ ২০২৪ সালের আগস্ট: শোকের ছায়ায় প্রতিরোধের দীপ্তি
আজ ২০২৫ সাল।
মাত্র এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই (৩ আগস্ট)—বাঙালি প্রত্যক্ষ করেছিল ভিন্ন এক ঐতিহাসিক দৃশ্যপট। রাজপথে মানুষের ঢল, পায়ের শব্দে কেঁপে উঠেছিল রাষ্ট্রের প্রাসাদ। প্রতিরোধের সেই উত্তাল ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ে ৫ আগস্ট–এ, যে দিনটি হয়ে ওঠে এক বিকল্প আগস্ট—যেখানে শাসক ও জনগণের মুখোমুখি অবস্থান স্পষ্ট হয়।
▣ সেই ৫ আগস্টে ইতিহাস কী দেখেছিল?
মানুষ দেখেছিল—
✸ গণগ্রেপ্তার,
✸ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা,
✸ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ,
✸ রাষ্ট্রীয় দমনযন্ত্রের সর্বাত্মক প্রয়োগ,
✸ এবং একইসাথে নাগরিক ঐক্য ও বিকল্প শক্তির অভ্যুদয়।
২০২৪-এর আগস্ট তাই শুধু অতীতের শোক নয়, ছিল বর্তমানের সংকট আর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি-র সংঘর্ষ। ১৫ আগস্ট যেমন শিখিয়েছে—স্বপ্নকে হত্যা করা যায়; তেমনি ৫ আগস্ট মনে করিয়ে দিয়েছে—স্বপ্ন আবারও জেগে উঠতে জানে।
● তবু কিছু প্রশ্ন অব্যাহত:
🔹 বাঙালি কি ১৯৭৫-এর পাঠ শিখেছে?
🔹 আমরা কি ২০২৪-এর ৩৬ জুলাই-৫ আগস্টের উত্তাল দিনগুলো থেকে শিক্ষা নিচ্ছি?
🔹 নাকি ভুল পথেই হাঁটতে থাকব, বারবার প্রতারিত হব ইতিহাসের কাছে?
জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার দায় আজকের প্রজন্মের।
আগস্ট তাই কেবল শোক নয়—একটি ঐতিহাসিক সতর্কবার্তা।
অত্যাচার, অবিচার ও ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে জাগ্রত বিবেকের ডাক।
● উপসংহার
আগস্ট আমাদের শোকের, প্রতিবাদের ও প্রতিরোধের মাস। এই মাস আমাদের সতর্ক করে দেয়—স্বাধীনতা রক্ষা শুধু অর্জনের নয়, তা সংরক্ষণেরও সংগ্রাম।
২০২৫ সালের আগস্টে দাঁড়িয়ে আমরা যদি ১৯৭৫-এর শোক আর ২০২৪-এর প্রতিরোধকে মিলিয়ে দেখি—তবে স্পষ্ট হয়:
ইতিহাস কখনো মিথ্যা সহ্য করে না।
রাজপথের জনতার পায়ের শব্দই সত্যের প্রকৃত লেখক।
আমরা যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারি—
তবে আগস্ট শুধু রক্তঝরা মাস নয়, হয়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পবিত্র পাথেয়।