নিজস্ব প্রতিবেদক, পঞ্চখণ্ড আই:
বিয়ানীবাজার পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা পরিষদের মালিকানাধীন একমাত্র সরকারি পুকুরটি রক্ষা ও অবৈধ লীজ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১২ জুলাই (শনিবার) দুপুরে পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারে বিয়ানীবাজার গণঅধিকার ফোরামের ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা জানান, পরিবেশ রক্ষা ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুকুরের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “এই পুকুর কোনো ব্যক্তির পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, এটি বিয়ানীবাজারবাসীর। দখলদারিত্ব ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে পুকুর দখলমুক্ত করা হবে— ইনশা আল্লাহ।”
বক্তারা আরও বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে জনস্বার্থে কাজ করা, অথচ ৪ ও ৫ আগস্টের ঘটনার পরও আবারও দখলদারদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি দ্রুত অবৈধ লীজ বাতিল ও দখলমুক্ত না করা হয়, তাহলে বৃহত্তর জনমত গড়ে তুলে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
বিয়ানীবাজার গণঅধিকার ফোরামের আহ্বায়ক মোস্তফা উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ আব্দুল হামিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—
মাওলানা ফয়জুল ইসলাম (চেয়ারম্যান, জিলালুল কোরআন সোসাইটি), আবুল খায়ের (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), কাজী আবুল কাশেম (সেক্রেটারি, দি বিয়ানীবাজার এডুকেশন সোসাইটি), কাজী জমির হোসাইন (আমীর, পৌর জামায়াত), শিক্ষক রুকন উদ্দিন, সমাজসেবক দেলোয়ার হোসেন, তানভির এলাহী মজুমদার, এম. শামসুল আলম, মাওলানা মুজিবুর রহমান, আব্দুল ক্বারীম হাক্কানী, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিয়ানীবাজার মৌজা-ফতেহপুর, জেএল নং ১০৬-এর ২নং খতিয়ানভুক্ত জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ১০৫৩ দাগের পুকুর রকম ভূমিসহ অন্যান্য দাগভুক্ত ভূমির আয়তন এক একর পাঁচ শতাংশ তিরানব্বই পয়েন্ট। এর মধ্যে রাস্তা, বাড়ি, ক্লাব বাদে ২৬টি দোকান ইতোমধ্যেই লীজধারীদের দখলে রয়েছে। ঈদের পর থেকে আরও অন্তত ৫টি অবৈধ দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে পুকুরপাড়ে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্না পঞ্চখণ্ড আই-কে বলেন, “এ ভূমি জেলা পরিষদের দায়িত্বাধীন। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জনস্বার্থে ব্যবহারে সরকারের আপত্তি থাকার কথা নয়। আমার জানা মতে, নতুন বছরে এ খতিয়ানভুক্ত কোনো ভূমি লীজ দেওয়া হয়নি এবং কেউ নবায়নও করেনি।”
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বন্দিপ কুমার সিংহ জানিয়েছেন, “আমরা কাউকে দোকান নির্মাণের জন্য জমি বন্দোবস্ত দেইনি। অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, শহরের পানি নিষ্কাশন এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় এই পুকুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পুকুর ভরাট ও অবৈধ দখল চালু থাকলে তা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।