নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর মিটফোর্ডে দিনদুপুরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে ছিল শত শত মানুষ, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। রক্তাক্ত নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে রাস্তার মাঝে এনে চলে ভয়ংকর উন্মত্ততা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে। রযাব-১০ অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও তামার তারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সোহাগ পূর্বে ওই এলাকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। সম্প্রতি মহিন ও টিটু সেই নিয়ন্ত্রণ দখল করতে চাইলে বিরোধ চরমে ওঠে। নিয়মিত চাঁদা না দেওয়ায় সোহাগকে হুমকি দেওয়া হয় এবং শেষপর্যন্ত এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সন্ত্রাসীরা সোহাগের নিথর দেহ টেনে রাস্তায় এনে তার মুখে ও বুকে পাথর দিয়ে আঘাত করছে। একজন সন্ত্রাসী মোবাইলে কথা বলতে বলতে লাশের ওপর লাফাচ্ছে, অন্যরা একের পর এক পাথর মেরে নির্মমতা প্রদর্শন করছে। ফুটেজ ভাইরাল হলে নিন্দায় মুখর হয় নেটিজেনরা।
ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের চার নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। বহিষ্কৃতরা হলেন—যুবদলের সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বিএনপি বলছে, এ ঘটনায় তাদের সংগঠন জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিএনপিকে জড়ানো নোংরা রাজনৈতিক অপচেষ্টা।”
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ঘটনা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।” ছাত্রশিবির, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন হত্যার নিন্দা জানিয়ে একে ‘বর্বরতার চূড়ান্ত রূপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
শেষ কথা হলো – মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড শুধু একটি অপরাধ নয়—এটি আমাদের সামাজিক বিবেক, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মানবিকতার ওপর এক গা শিউরে ওঠা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।