পঞ্চখণ্ড আই. কম পোর্টালের দৃষ্টিকোণ থেকে
✍️ উপসম্পাদকীয় | বিশেষ কলাম
২০২৩ সালের উত্তাল জুলাই মাস আমাদের জাতীয় রাজনীতির নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দেয়। ঢাকাসহ সারা দেশে চলমান ‘জুলাই আন্দোলন’ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনার নাম নয়—এটি একটি তরুণ প্রজন্মের অন্তর্জাগতিক অভ্যুত্থান, একটি সমাজ-চেতনার পুনরুত্থান, একটি ব্যালট-নির্ভর ভবিষ্যতের প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ।
পঞ্চখণ্ড আই. কম পোর্টাল, বিয়ানীবাজারের প্রাণকেন্দ্রিক গণমাধ্যম হিসেবে, স্থানীয়ভাবে আন্দোলনের অভিঘাত ও প্রতিবর্তন মূল্যায়নের প্রয়াসে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরছে।
প্রাপ্তি: রাজনৈতিক জমিনে সচেতনতার পুনর্জন্ম
১. তারুণ্য এবং প্রত্যয়
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি তরুণদের দৃঢ় অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, এমনকি মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখা গেছে। পঞ্চখণ্ড অঞ্চলেরও কিছু তরুণ ঢাকায় গিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, যা রাজনৈতিক কার্যক্রমে অঞ্চলিক সম্পৃক্ততার পরিচয় বহন করে।
২. ভোটাধিকারের প্রশ্নে দৃঢ়তা
এ আন্দোলন ভোটাধিকার, ন্যায়ের শাসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে যে জোরালো বার্তা দিয়েছে, তা আপোষহীন। তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন না হলেও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ পুনঃস্থাপনের দাবি ফিরে এসেছে।
৩. মফস্বল থেকে কেন্দ্রের সংযোগ
আন্দোলনের ঢেউ শুধু ঢাকায় থেমে থাকেনি। ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব রিপোর্ট, স্থানীয় ছাত্রনেতাদের পোস্ট—সব মিলিয়ে বিয়ানীবাজার থেকে শুরু করে গোটা সিলেট অঞ্চলে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই আন্দোলন।
অপ্রাপ্তি: কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের অভাব
১. দাবির বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই
আন্দোলনের মুখ্য দাবি—একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের ঘোষণা বা গঠন—এখনও অধরাই থেকে গেছে। সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
২. গ্রেফতার-হামলার ভয়াবহতা
অনেক তরুণ গ্রেফতার হয়েছেন, মামলা খেয়েছেন। সাংবাদিক আবু তুরাব নিহত সহ বিয়ানীবাজারের পঞ্চখণ্ডে অঞ্চলের অন্তত দুইজন শিক্ষার্থী ঢাকায় অবস্থানকালে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
৩. মফস্বলের অংশগ্রহণ সীমিতই রয়ে গেল
সামগ্রিক আন্দোলনে মফস্বলভিত্তিক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়নি। সচেতন তরুণরা ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত থাকলেও দলগত বা সংগঠিতভাবে স্থানীয় সম্পৃক্ততা কম ছিল।
৪. আন্দোলনের সাংগঠনিক দুর্বলতা
নেতৃত্বে অভিন্নতা ও রাজনৈতিক কৌশলে সমন্বয়হীনতা ছিল লক্ষণীয়। আন্দোলন একপর্যায়ে আবেগনির্ভর হয়ে ওঠে, বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ অনুপস্থিত ছিল।
পঞ্চখণ্ডের প্রেক্ষাপট: আশা-নিরাশার দোলাচলে
পঞ্চখণ্ড অঞ্চলে গণতন্ত্র নিয়ে মানুষের আগ্রহ ঐতিহাসিক। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ অঞ্চলের মানুষের সক্রিয়তা প্রশংসিত হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর এ অঞ্চলের তরুণদের মাঝে আলোচনার নতুন একটি ধারা গড়ে উঠেছে, তবে বাস্তব জাগরণে তা কতটা রূপ নেবে, তা সময়ই বলবে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি—তরুণদের একাংশ সংবাদপত্র পড়ে, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ শোনে, পোস্ট করে, এমনকি স্থানীয়ভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও করে। এই চেতনা যদি ধারাবাহিকতা পায়, তবে পঞ্চখণ্ড অঞ্চল থেকে ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্ভব অবধারিত।
উপসংহার
জুলাই আন্দোলন আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে এক নতুন পাঠ যুক্ত করেছে—তা প্রাপ্তি হোক বা অপ্রাপ্তি। আর পঞ্চখণ্ডের মানুষ সেই পাঠ পাঠ করছে মনোযোগ সহকারে।
প্রতিবাদ নয়, পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি—এটাই হোক আগামী দিনগুলোর মূলমন্ত্র।