1. news@panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই : পঞ্চখণ্ড আই
  2. info@www.panchakhandaeye.com : পঞ্চখণ্ড আই :
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

মসনদ ও হাজতের বাস্তবতা: আতাউর রহমান

আতাউর রহমান, শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও সমাজচিন্তক
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

“ক্ষমতার একপ্রান্তে থাকে মসনদ, অপরপ্রান্তে থাকে হাজত”— এই অমৃত সত্যটি জীবনের ঘাতপ্রতিঘাতে আরও স্পষ্ট হয়ে প্রকাশিত হয়। যে ব্যক্তি ক্ষমতায় আরোহণ করে, সে যেমন রাজত্ব ও কর্তৃত্বের স্বাদ পেতে পারে, অপরিপক্ক ও অপরাধপ্রবণ হলে অল্প দিনেই কারাগার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

একজন শিক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে আমার জীবন ও অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে ক্ষমতা অস্থায়ী, পদ অল্প সময়ের জন্য থাকে, কিন্তু ন্যায় ও সততা অমর ও অমৃতসমান। ইতিহাস ঘেঁটেও দেখা যায় যে এই সত্যটি অসংখ্য শাসক ও রাজনীতিবিদের জীবনকে স্পষ্টভাবেই স্পর্শ করেছে।

মোগল সম্রাট অরঙ্গজেব আলমগীর ক্ষমতায় আরোহণ করেছিলেন অমৃতসম মহিমায়—রাজ্য বিস্তার করেছিলেন, সম্রাজ্যে স্থিতিশীলতা এনেছিলেন। কিন্তু অপরপ্রান্তে রয়েছে অপরকে কারাগারে নিক্ষেপ করার কলঙ্ক। অরঙ্গজেব নিজের পিতা সম্রাট শাহ জাহানকে কারারুদ্ধ করেছিলেন, ভাই দারা শুকোকে হত্যা করেছিলেন—রাজনীতিতে যা অপরিহার্য মনে করেছিলেন, তাই করেছিলেন। অপর দিকে অরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর দুর্বল সম্রাট বাহাদুর শাহ ও অনান্যরা কারাগার ও দুর্বল কর্তৃত্বের ঘানি টেনেছে।

আধুনিক যুগের রাজনীতিতেও “মসনদ ও হাজত” যে অমৃত ও গরল—তা সমানভাবে সত্য। অনেক নেতা অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসেন, কিন্তু দুর্নীতি বা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কারণে অল্প দিন পরই কারাগার পর্যন্ত যেতে হয়। যেমন পাকিস্তানে জুलফিকার আলী ভুট্টো অল্পকাল ক্ষমতায় থাকার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। আবার বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা দুর্নীতি ও অপরাধের দায়ে কারাবন্দিও হয়েছেন।

একজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি বুঝেছি, আমার কাছে ক্ষমতা ছিল একটা মহাপরীক্ষার মত—কতটুকু ন্যায় ও কল্যাণের জন্য তা ব্যবহার করতে পারছি, নাকি আত্মপ্রচার ও অনাচারের জন্য? কারণ ক্ষমতা মানে হচ্ছে অপরকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ, অপরকে চাপ দেওয়ার হাতিয়ার নয়। ঠিক যেমনটি ইতিহাসে অনেক নেতা ও সম্রাটকে দেখতে পাই—একসময় তারা মহাদাপটে মসনিদে উপবিষ্ট ছিল, আবার অপরাধ ও অনাচারের কারণেই তাদেরকে কারাগারের অন্ধকার ঘর পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

রাজা দ্বিতীয় লুই ষোড়শ ও রানী অঁতোয়ানেট যেমন সম্রাট হিসেবে সমৃদ্ধ জীবন কাটাচ্ছিলেন, ঠিক অপরিপক্ক ও অপরিণত সিদ্ধান্তের কারণেই তারা কারাগার ও গিলোটিন পর্যন্ত পৌঁছান। অপর দিকে মহাত্মা গান্ধীর মত নেতা অল্প ক্ষমতা নিয়ে অজেয় হন কারণ তিনি নৈতিকতা ও কল্যাণকে সামনে রেখে চলেন।

আমার অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাস থেকে বলছি—মসনদ ও হাজত আসলে একটা অদৃশ্য সুতোয় গেঁথে রয়েছে। যে অপরকে নির্যাতন করে ক্ষমতা উপভোগ করে, সে অল্পকাল পরেই অপরের ঘর অন্ধকার করার অপরাধে নিজের ঘর অন্ধকার হতে দেখে। অপর দিকে যে কল্যাণ ও ন্যায়কে সামনে রেখে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে, সে অল্প হলেও অমর হয় স্মৃতিতে ও ভালোবাসায়।

ইতিহাস ও জীবনের অভিজ্ঞতা তাই স্পষ্ট করে যে, রাজনীতি হলো অস্থায়ী আসন। ক্ষমতা অপরিবর্তনীয় বা অমর নয়; এটা অল্প সময়ের জন্য অর্পিত কর্তৃত্ব মাত্র। যে পর্যন্ত নৈতিকতা ও কল্যাণকে সামনে রাখা যায়, ক্ষমতা স্থায়ী ও মহিমাময় থাকে। কিন্তু অনৈতিকতা ও অপরাধ প্রবেশ করলে সেই ক্ষমতাই কারাগারের অন্ধকার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। তাই ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে চাই দায়িত্ব ও দূরদৃষ্টি; কারণ “মসনদ ও হাজত” যে একই সূত্রে গেঁথে রয়েছে, তা অমোঘ সত্য।

Leave a Reply

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট