পঞ্চখণ্ড আই.কম | সম্পাদকীয় | ১২ জুন ২০২৫
ঈদের আনন্দ যখন জনপদে, তখন জলাবদ্ধ দুর্ভোগে ডুবে সিলেটের কিছু গ্রাম। আগাম বন্যার আশঙ্কা এবারও খুব একটা আলোচিত হয়নি, কিন্তু প্রকৃতি আপন নিয়মে সাড়া দিয়েছে। হবিগঞ্জ ও আশপাশের গ্রাম যখন পানিবন্দি, তখন ঈদের দিনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন — নিঃশব্দে, নিরলংকারভাবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মানবিক উপস্থাপন একটি ‘সফ্ট মেসেজ’ — নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ঈদের দিন রান্না করা উন্নতমানের খাবার যখন সেনাসদস্যরা বন্যার্তদের হাতে তুলে দেন, তখন তা কেবল সহানুভূতির প্রকাশ নয়, বরং একটি গভীর রাষ্ট্রদর্শনের প্রকাশ : “আমরা জনগণের — সুখে-দুঃখে পাশে আছি, পাশে থাকব।”
একদিকে জনতার পাশে দাঁড়ানোর এই নিঃশব্দ বার্তা, অন্যদিকে মব ভায়োলেন্স, চাঁদাবাজি ও অরাজকতা দমনে সেনাবাহিনীর হুশিয়ারি — যেন হার্ড ও সফ্ট মেসেজের এক দুর্লভ ভারসাম্য। সেনাবাহিনী দেখিয়েছে কীভাবে শক্তি প্রয়োগ না করে ম্যাজিস্ট্রেসি সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়।
এবারের ঈদে সিলেট অঞ্চলের ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, বিছনাকান্দি প্রভৃতি পর্যটন এলাকায় সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুশৃঙ্খল নজরদারি নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পর্যটক এবার নিরাপদে ঘুরেছেন — কেউ হয়রানির শিকার হননি, কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় জিম্মি হননি। এ এক নীরব সংস্কার-যাত্রার সূচনা।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও পরিমিতিবোধের অনন্য নজির স্থাপন করেছে। গত বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সন্ধিক্ষণে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল অবস্থান রাষ্ট্রকে রক্তপাত থেকে বাঁচিয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক ভারসাম্য। সে সময়ও সেনাবাহিনী হিরো ছিল, কিন্তু হিরোইজমে না মেখে থেকে গিয়েছে জনতার ছায়ায়।
ঈদে এই মানবিক সহায়তা, দুর্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সীমান্ত-নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতি, মাদক-অস্ত্র-অপরাধ দমনে অভিযাত্রা — সব মিলিয়ে সেনাবাহিনী আজ এক নির্ভরতার প্রতীক। যেখানে অন্যান্য বাহিনী এখনো পেশাদারিত্ব অর্জনের পথে, সেখানে সেনাবাহিনী শুধু দায়িত্ব পালন করছে না, বরং অন্যদের পথ দেখাচ্ছে।
এই সফ্ট মেসেজ একটি বার্তা মাত্র নয়, এটি একটি দৃষ্টান্ত। সেনাবাহিনী দেখিয়ে দিচ্ছে কেমন করে একজন পেশাদার, দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক বাহিনী জনগণের আস্থা অর্জন করে। যে বাহিনী নিজে প্রচারে আগ্রহী নয়, কিন্তু যার কাজের ভাষাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে জোরালো প্রচার।
আজ, যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক গুজব ও ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে, তখন সেনাবাহিনীর এই অবস্থান জাতিকে সাহস জোগায়। আমরা মনে করি, এই গণতন্ত্র-সহায়ক ও জন-আস্থাভাজন সেনাবাহিনীর ভূমিকাই আগামী দিনের শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি।
জনগণের পাশে থাকা সেনাবাহিনীর এই নীরব বার্তাকে আমরা পঞ্চখণ্ডআই.কম-এর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বাগত জানাই।
— সম্পাদক
পঞ্চখণ্ডআই.কম