পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
বিয়ানীবাজার পৌরসভার পিএইচজি হাইস্কুল সংলগ্ন অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঘিরে সম্প্রতি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৫ সালের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটের ইজারা ও দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিষয়টি ঘিরে আলোচনার সূত্রপাত ২৮ মে থেকে, যখন জানা যায়—বিয়ানীবাজার পৌর প্রশাসকের অধীনে পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ১৯টি দরপত্র জমা পড়লেও মাত্র তিনটি দরপত্র গণনায় আসে। অনেকেই এ ঘটনাকে “সিন্ডিকেটের কারসাজি” বলে অভিযোগ করছেন। ফেসবুকজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি দাবিও—”সিন্ডিকেটমুক্ত বিয়ানীবাজার (পিএইচজি সংলগ্ন মাঠ) পশুর হাট চাই”।
সমালোচকরা দাবি করছেন, ২০২৪ সালে যেখানে এ হাট ১২ লক্ষ টাকারও বেশি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে এবার তা কমিয়ে মাত্র ১,৮০,০০০ টাকায় নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা মনে করেন, এতে পৌর রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত হবে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি উঠেছে নাগরিকদের পক্ষ থেকে।
Π প্রশাসনের ব্যাখ্যা :
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মস্তফা মুন্না জানান, বিগত দুই বছরে পিএইচজি সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী পশুর হাট দশ হাজার টাকা ইজারায় দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “গরুর বাজার ইজারা আর কোরবানির অস্থায়ী হাট ইজারা এক নয়—এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।”
Π নাগরিকদের প্রশ্ন ও জবাব:
৩০ মে, পৌর নাগরিক শমশের আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাবেক মেয়র ফারুকুল হকের কাছে প্রশ্ন রাখেন—”যদি হাট ইজারা ১২ লক্ষাধিক টাকায় হয়ে থাকে, তবে ইউএনও সাহেব ও পৌর সচিব কেন ১০ হাজার টাকার কথা বলছেন? বাকি ১২ লক্ষ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার হিসাব কোথায়?”
Π সাবেক মেয়রের বক্তব্য:
৩১ মে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে সাবেক মেয়র ফারুকুল হক জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পুরো বাজার, পশুর হাটসহ, ইজারা দেওয়া হয় ১৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৫০০ টাকায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পশুর হাটকে আলাদা ইজারায় নেওয়ার কথা জানানো হলে সময় সংকটের কারণে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে অস্থায়ীভাবে হাটটি দশ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয় মূল ইজারাদারকেই।
তিনি জানান, “তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেবের নির্দেশে অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়েছিল, যা ইউএনও অফিসের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।”
ফারুকুল হক দাবি করেন, “কোনো টাকা বেহিসাব হয়নি, পৌরসভার সকল রাজস্ব যথাযথভাবে পৌর কোষাগারে জমা হয়েছে।”
Π সম্পাদকীয় মন্তব্য :
এই বিতর্ক শুধু টাকার নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন। যখন ইজারা প্রক্রিয়ায় একাধিক দরপত্র জমা পড়ে, অথচ কার্যত কয়েকটিকে বিবেচনায় আনা হয়, তখন নাগরিকদের মনে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। প্রশাসনের দায়িত্ব এমন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যেখানে ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও জনস্বার্থ অগ্রাধিকার পায়।
আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন এবং ভবিষ্যতে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে, সেজন্য পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজন হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে জনগণের আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনাই শ্রেয়।