আতাউর রহমান : ছবিতে একটি টুল, খুব সাধারণ কাঠের চেয়ার। নেই পেছনে হেলান দেওয়ার ব্যবস্থা, নেই কোনো আরামের উপকরণ। সামনে একটি টেবিল, তাতে রাখা মাইক্রোফোন। এমন চিত্র আমরা সাধারণত মাদ্রাসার কোনো দরসগাহে দেখে থাকি। কিন্তু এই বিশেষ চেয়ারে বসেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী বড় ছাহেব—আধুনিক যুগের অন্যতম আলোচিত ও সম্মানিত আলেমে দ্বীন।
এই সাদাসিধে টুল কেবল তাঁর বসার স্থান নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত শিক্ষা, এক গভীর বার্তা। এই চেয়ার তাঁর আত্মদর্শনের প্রতীক।
Π হেলানবিহীন চেয়ার: আত্মসংযমের মুকুট
এই চেয়ারে নেই উচ্চতা, নেই আরাম, নেই দম্ভের ঠাঁই। কিন্তু এই সরল চেয়ারে বসে তিনি যে বাণী দেন, তা আকাশ ছুঁয়ে যায়। তাঁর চেয়ারে হেলান না থাকার প্রতীকী তাৎপর্য অনেক।
এ যেন এক মেসেজ— “দ্বীনের মঞ্চে বিশ্রামের জায়গা নেই, এখানে দায়িত্ব বড়।”
তিনি যেভাবে পিঠ সোজা করে বসেন, তেমনই সোজা তাঁর নীতি, পরিস্কার তাঁর উদ্দেশ্য—
আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কিছুই নয়।
Π সাদাসিধে টুলে সত্যিকারের নেতৃত্ব
আজকের সমাজে নেতৃত্ব মানে বিলাসিতা, আলাদা চেয়ার, আলাদা আসন। কিন্তু বড় ছাহেব দেখিয়ে দিয়েছেন,
নেতৃত্ব মানে অহঙ্কার নয়, বরং দায়িত্ব, ত্যাগ ও দৃষ্টান্ত।
একটি টুলেও নেতৃত্বের জ্যোতি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব—যদি নেতৃত্ব আসে তাকওয়ার আলো থেকে।
Π তাসাউফের অনুশীলন বিনয়ের মাটিতে
বড় ছাহেবের তাসাউফ কোনো বাহ্যিক লেবাসে সীমাবদ্ধ নয়। এটি তাঁর জীবনাচরণে, ব্যবহারে, এমনকি চেয়ারে পর্যন্ত প্রকাশিত। তিনি আমাদের শেখাচ্ছেন—
“আসল সৌন্দর্য বাহিরে নয়, অন্তরে। আর সেই অন্তর জেগে থাকে বিনয়ের ছায়ায়।”
Π এই চেয়ার আমাদেরও প্রশ্ন করে…
আমরা কি আজ আমাদের আলেমদের জন্য আলাদা রাজসিংহাসন খুঁজি? আমরা কি বক্তার মর্যাদা নির্ধারণ করি তাঁর চেয়ারের ভিত্তিতে?
এই চেয়ার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলছে—
“যে আলেম নিজে নিচু হতে জানেন, তিনিই জাতিকে সবচেয়ে উঁচুতে তুলে ধরতে পারেন।”
Π উপসংহার:
এই ছোট একটি চেয়ার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বিনয়ের গভীরতা বাহ্যিক উচ্চতার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী বড় ছাহেবের এই হেলানবিহীন চেয়ারে বসে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাওয়া হলো এক জীবন্ত মিনবার। এমন জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গ আমাদের শেখায়—
“নেতা হও মানে মানুষ হও; নিচু হয়ে বাঁচো, তবেই আসমান তোমার ছোঁয়ায় ধন্য হবে।”