স্বদেশ নিয়ে জনমনে আস্থার সংকট। সর্বত্র এখন অস্থিরতা বিরাজমান। কেন জানি মানুষের মাঝে স্বস্তি নেই, কেন জানি কোথাও শৃঙ্খলা নেই। প্রশাসন, থানা, হাসপাতাল, অফিস-আদালতে সর্বত্র হাজিরা খাতায় হাজিরা আছে কিন্তু কাজের গতিতে অগ্রগতি নেই। সর্বত্র সন্দেহের খেলা। চলমান বাক স্বাধীনতায় কেউ মুখ খোলে কারো সাথে কথা বলতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। আবার এক শ্রেণির লোক আছে কর্তার ভূমিকায়। তাদের আস্ফালন নজরকাড়া। স্বাধীনতার নামে কিংবা অধিকার আদায়ের নামে দেশে মগ জাস্টিস চর্চাও চলছে। কখনো রাজপথে ব্যারিকেট, কখনো শিক্ষালয় ঘেরাও, কখনো শিক্ষাবোর্ডের দপ্তর ঘেরাও, কখনো সচিবালয় ঘেরাও, কখনো বঙ্গভবন ঘেরাও ইত্যাদি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ বেশ উদ্বিগ্ন। জনমনে প্রশ্ন, কোন পথে চলছে স্বদেশ!
দেশের মানুষের আয়-বৃদ্ধির যোগান নেই, অথচ বাজারে চলছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সাবরেজিস্টার অফিস, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, ভূমি অফিসের কার্যক্রম সেই আগের মতোই চলছে। হাসপাতালের রোগীদের খাবারেও বাণিজ্য। সর্বত্র চলছে সিণ্ডিকেট কেন্দ্রিক ব্যবসা। সম্প্রতি ব্যাংকের গ্রাহকেরাও ভালো নেই। ব্যাংক থেকে চাহিদা মতো পাচ্ছে না গ্রাহকেরা তাদের জমাকৃত টাকা। এদিকে ঢাকা শেয়ারবাজার ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে হরদম ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে। এ টালমাটাল অবস্থা আর কতদিন? এসব পরিত্রাণ হওয়া দরকার।
আর বর্তমান যুগের রাজনীতিতে দেশপ্রেম নেই। এখনকার দিনের রাজনীতি-তো ছলচাতুরীর ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এ পেশায় যারা নিয়োজিত, তাদের সংখ্যা দেশের প্রায় শতকরা তিরিশ ভাগ। সাধারণ মানুষের চোখে, এসব রাজনীতি কর্ম এখন ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও দখলদার শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সাধারণ লোকেরা নিরব দর্শক মাত্র। তাই অন্তবর্তীকালিন সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া একটাই- জনমনে স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ, মসনদ পানের লোভীদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় আকাশ পাতাল ফারাক। শোষকদের হাত থেকে দেশ বাঁচুক, মানুষ বাঁচুক – এটা সকলেই চায়।
আর শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে সকল স্তরে সংস্কার হোক। কোনক্রমেই দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও ফড়িয়াবাদরা যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে খালাস না পায়। স্বদেশের মানুষ সম-অধিকার চায়। কিন্তু সংস্কারের আস্থায় গিয়ে যেন আমরা প্রতিহিংসার রাস্তা তৈরি না করি, সে দিকে আরও বেশি খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
#পরিচিতি: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও মাস্টার ট্রেইনার। সাবেক সভাপতি, বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব।