
পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক :
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিকে ঘিরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ছিল তীব্র বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা। দলটিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার দাবি, নিষেধাজ্ঞার আহ্বান এবং রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার নানা প্রচেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সিলেট জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে দলটি প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যা নির্বাচনী মাঠে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করে এবং সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেও সরকারকে নানা ইস্যুতে সমর্থন দেয়। এ কারণে শেখ হাসিনার পতনের পর জাতীয় পার্টিকেও রাজনৈতিকভাবে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জোরালো হয়। এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দলটিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুললে রাজধানীতে দলটির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। ওই সময় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতায় তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল।
তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েন এবং সিলেটজুড়ে জাতীয় পার্টি আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। প্রথম দফায় দলটি সিলেট-১ (নগর–সদর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা–ফেঞ্চুগঞ্জ–বালাগঞ্জ) আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক এবং সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর–গোয়াইনঘাট) আসনে মুজিবুর রহমান ডালিমকে প্রার্থী ঘোষণা করে। পরবর্তী ধাপে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ–কানাইঘাট) আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন খালেদকে এবং সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুন নূরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী আব্দুন নূর এরশাদ আমল থেকেই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এবং সিলেট জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি কবি ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি পরিচিত। তার মনোনয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই আসনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রস্তুতি নতুন গতি পেয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন একাধিক আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও এখন পর্যন্ত কেবল সিলেট-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। ফলে সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে এই একটি আসনেই জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।
দীর্ঘ সময় আলোচনার বাইরে থাকার পর জাতীয় পার্টির এই সক্রিয় নির্বাচনী প্রস্তুতি সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজনীতি সচেতন মহলের মতে, জাতীয় পার্টির সক্রিয় অংশগ্রহণে সিলেটের নির্বাচনী মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য কৌশল পুনর্বিন্যাসের চাপ তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক দখলের যে হিসাব এতদিন ধরে কষা হচ্ছিল, বাস্তবে দলটির প্রার্থিতা ঘোষণার ফলে সেই পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।