
পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
বিয়ানীবাজার উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২’ জোরদার করা হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ।
পুলিশ ও থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) পরিচালিত অভিযানে বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুল বাছিতকে তার নিজ এলাকা পৌরসভার খাসড়ীপাড়া গ্রাম থেকে আটক করা হয়। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওমর ফারুক জানান, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ এর অংশ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি সুনির্দিষ্ট হত্যা মামলা রয়েছে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে পৃথক অভিযানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিয়ানীবাজার পৌর কমিটির সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম সাকেল (৩২) সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, তারা আত্মগোপনে থাকাবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক হন। সাকেলের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট পরবর্তী একটি হত্যা মামলাসহ বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চিনি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ বিভিন্ন মামলা চলমান রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত অপর দুইজন হলেন চারখাই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল আহমদ (৪৫) এবং কুড়ারবাজার এলাকার আলী আহমদ (৫০)। এ মামলার বাদী দুবাগ এলাকার তাজিম চৌধুরী, যিনি ৫ আগস্টের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিয়ানীবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে থানা পুলিশ। ওসি মো. ওমর ফারুক যোগদানের পর থেকেই অভিযানের কৌশল ও তৎপরতায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানায়, চলমান অভিযানে নিয়মিত মামলার আসামিদের পাশাপাশি নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্দেহভাজনদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
অভিযানের অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল জব্দ ও ব্যবহারকারীদের জরিমানার পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পুরনো মামলার তালিকা পর্যালোচনা করে দাগী অপরাধী, ফৌজদারি ও রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন এবং তৃণমূল পর্যায়ের অনেকে মামলার অজ্ঞাত আসামি হওয়ার আশঙ্কায় ঘরছাড়া অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের পরিবার-পরিজনরাও চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, সরকার পতনের পর বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের অন্তত হাজারখানেক নেতাকর্মী এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আসামি হয়েছেন। পাশাপাশি গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একাধিক পুরনো মামলাও নতুন করে যাচাই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তারা জেনেবুঝেই আত্মগোপনে রয়েছেন। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপরাধী যেই হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”