
আছিরগঞ্জ থেকে ফিরে আব্দুস সামাদ অপু :
আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে দিনটিতে ছিল এক অন্যরকম আবেগ। সকাল থেকেই শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কারণ—এ দিনটি ছিল তিনজন প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানানোর দিন।
আজ ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শফিউল আলম এর সভাপতিত্বে ও সহকারী শিক্ষক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার আবেগে ভরিয়ে তোলেন পুরো প্রাঙ্গণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক শেখ আশরাফুর রহমান। তিনি বলেন—
“শিক্ষকতা শুধু পাঠদান নয়, এটি এক মহান পেশা যেখানে দায়িত্ব, নৈতিকতা ও মানবিকতার সংমিশ্রণ ঘটে। বিদায়ী শিক্ষকেরা তাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সেই পেশাগত সততা ও পেডাগোজির প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি ও দেশ এডিশন অনলাইন পত্রিকার সহ-সম্পাদক আতাউর রহমান, তিনি বলেন—
“এই বিদায় কেবল কর্মস্থল থেকে, শিক্ষার্থীদের হৃদয় থেকে নয়। আপনাদের অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে থাকবে।”

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শাহপরান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক খছরুজ্জামান পাঠাদার, এবং নালবহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমদ।
সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিক, সহকারী শিক্ষক জয়নুল ইসলাম এবং ওবায়দুল্লাহ। তাঁরা তিনজনই ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা, সহকর্মীদের ভালোবাসা ও প্রতিষ্ঠানের গর্ব।
অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ শফিউল আলম, স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক আকরাম আলী, শিক্ষিকা আফিয়া বেগম, এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফয়জুল আলম, আব্দুল আহাদ, ও খছরুল আলম। শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী আবু নাসির মুরাদ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
বিদায়ী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন শিক্ষার্থী নাবিলা আক্তার তুলি এবং মানপত্র হস্তান্তর করেন তিন ক্ষুদে শিক্ষার্থী রাখি, নিশাত ও আহমেদ আলী।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে ছিল এক আবেগঘন মুহূর্ত—চোখে জল, মুখে হাসি। কেউ বলছিলেন, “এ বিদায় কর্মস্থল থেকে, হৃদয় থেকে নয়।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ শফিউল আলম বলেন,
“আপনাদের সততা, সময়নিষ্ঠা ও শিক্ষার প্রতি নিবেদন এই বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
এভাবেই আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের আকাশে-বাতাসে দিনটি মিশে ছিল বিদায়ের বেদনা আর গর্বের মেলবন্ধন— যেখানে শিক্ষকত্ব ছিল শ্রদ্ধার, ভালোবাসার ও আলোকিত মানবতার প্রতীক।