
আতাউর রহমান
জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠে ততই অনিশ্চয়তা ও প্রত্যাশার মিশেল বাড়ছে। আলোচনা কেবল “কবে হবে”— এই প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়; বড় প্রশ্ন এখন, “কেমন হবে?”
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন হতে পারে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে। কিন্তু সময়সূচি ঘোষণার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো— নির্বাচনের মান, অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে।
ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী একটি ক্ষেত্র। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে এ আসনে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি একে করেছে জাতীয় মনোযোগের কেন্দ্র। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে ভোটের মাঠে অংশগ্রহণের ঘাটতি, ভোটারদের অনীহা এবং দলীয় মনোনয়ননির্ভর প্রার্থীতার প্রভাব। একসময় যে মাঠে উৎসবের আমেজ ছিল, এখন সেখানে নীরবতা ও হতাশা।
“সিলেট-৬-এর মানুষ চায় এমন নির্বাচন, যেখানে জয় বা পরাজয়ের চেয়ে বড় হবে আস্থার পুনর্জাগরণ।”
প্রত্যাশা: নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য ভোট
বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের জনগণ এখনও আশাবাদী— তারা চায় এমন একটি নির্বাচন, যেখানে
● প্রতিটি দল অংশ নেবে,
● প্রতিটি ভোটার ভয়হীনভাবে কেন্দ্রে যাবে,
● এবং ফলাফল প্রতিফলিত করবে জনগণের ইচ্ছা।
তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রত্যাশা করে— কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও ডিজিটাল সুযোগের সম্প্রসারণ। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এখনো তৃণমূলের বাস্তব চাহিদার চেয়ে মনোনয়ন রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত।
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথে করণীয়
নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই নিতে হবে কঠোর প্রস্তুতি—
● হালনাগাদকৃত ও সঠিক ভোটার তালিকা,
● প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি নজরদারি,
● প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ,
● এবং প্রার্থীদের জন্য সমান প্রচারণা সুযোগ।
সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি— যেন ভোটকেন্দ্র আবার পরিণত হয় জনগণের আস্থার প্রতীকে।
গণতন্ত্রের প্রশ্ন: সময় নয়, মান
গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি সময় নয়, মানের প্রশ্ন।
তারিখ ঘোষণা করলেই নির্বাচন হয় না; নির্বাচন হয় তখনই, যখন ভোটার বিশ্বাস করে— তার ভোটের মূল্য আছে।
যদি সেই আস্থা ফেরানো না যায়, তাহলে সময় ঘনালেও গণতন্ত্র দূরে থেকেই যাবে।
সময়ের চেয়ে বড় বিশ্বাস
জাতীয় নির্বাচন কতদূর— সেই উত্তর সময় দেবে। কিন্তু সিলেট-৬ এর মানুষ আজ চায় এমন একটি ভোটের উৎসব, যেখানে হার বা জয়ের চেয়ে বড় হবে মানুষের বিশ্বাস ও অংশগ্রহণের পুনরুদ্ধার।
“নির্বাচন হোক জনগণের উৎসব— না যে উৎসব, তাতে হারিয়ে যাক বিশ্বাস।”