ফলাফলের সারসংক্ষেপ
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডে যখন সামগ্রিকভাবে পাশের হার কমে গেছে, তখন বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের ফলাফল যেন তার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলেজের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ১৪ জন, অকৃতকার্য ১৩৫ জন। হিউম্যানিটিজ বিভাগে পাস ৭৬ জন, অকৃতকার্য ১৯০ জন এবং বিজ্ঞান বিভাগে কৃতকার্য ৫ জন, অকৃতকার্য ৭ জন।
সব মিলিয়ে কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪২৭ জন, আর কৃতকার্য মাত্র ৯৫ জন—পাসের হার প্রায় ২২ শতাংশেরও কম। এক সময়ের সুনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এমন ফলাফল নজিরবিহীন, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
কেন এই বিপর্যয়
শিক্ষাবিদদের মতে, এ বছরের ফলাফল নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে কয়েকটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে—
১️. একাডেমিক দুর্বলতা ও অনিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম:
করোনাকাল পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাসে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অনলাইন শিক্ষার অভ্যাস থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে নিয়মিত অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে না পারায় শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের গভীরতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২️. ইংরেজি ও গণিত/পরিসংখ্যান বিষয়ে দুর্বলতা:
প্রতিবছরই ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র এবং ব্যবসায় শিক্ষার পরিসংখ্যান বিষয়ে দুর্বল প্রস্তুতি ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক গাইডলাইন ও রেমেডিয়াল সাপোর্টের অভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নম্বর হারায় এই বিষয়গুলোতেই।
৩️. শিক্ষক সংকট ও বিভাগীয় ভারসাম্যহীনতা:
কিছু বিভাগে অভিজ্ঞ ও স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একইসাথে একাডেমিক কাউন্সেলিং, মডেল টেস্ট ও রুটিনভিত্তিক মূল্যায়নের অভাবও ফলাফলকে নিম্নমুখী করেছে।
৪️. পরীক্ষাভীতি ও মানসিক চাপ:
অনেক শিক্ষার্থী সিলেবাস শেষ করতে না পারায় পরীক্ষার আগ মুহূর্তে ভয় ও মানসিক চাপের মধ্যে পড়েছে। এতে লিখিত পরীক্ষায় তাদের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়নি।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাডেমিক দুর্বলতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবই সবচেয়ে বড় সংকট। দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ না করায় এই বিপর্যয় ঘটেছে। তারা মনে করেন, “বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা শনাক্ত করে দ্রুত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে।”
ভবিষ্যৎ দৃষ্টি ও করণীয়
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কথা হয় একাধিক শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের সাথে। তাঁরা কয়েকটি কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলেছেন—
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে কলেজটি তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে।
উপসংহার
বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের এবারের এইচএসসি ফলাফল শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং গোটা অঞ্চলের নারী শিক্ষার মান নিয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানাচ্ছে। একসময় যে কলেজের নাম ছিল “আদর্শ”, আজ সেটি যেন সংকটের প্রতীকে পরিণত হচ্ছে। তাই এখনই প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা—যাতে আগামী বছর কলেজটি সত্যিকার অর্থেই “আদর্শ” অবস্থানে ফিরে আসতে পারে।