পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনেস্কো ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপন করে আসছে শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে। এবারের প্রতিপাদ্য— “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষা: স্বয়ংক্রিয়তার যুগে মানবিক দক্ষতা সংরক্ষণ।”
প্রযুক্তির অগ্রগতির এ যুগে শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে, তবুও মানবিকতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পাঠ কেবল একজন শিক্ষকই দিতে পারেন— এমন বার্তা নিয়েই এবারের দিবস উদযাপিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক জাতি গঠনের মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা এখনো সীমিত পর্যায়ে। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকরা নানা সংকটে ভুগছেন। যোগ্য ও মেধাবী তরুণরা শিক্ষকতায় আসতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা শিক্ষকদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার (৫ অক্টোবর) বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে “শিক্ষকতা পেশা : মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি” শীর্ষক র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্না এর সভাপতিত্বে এবং একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুর রহমান এর সঞ্চালনায় আয়োজিত সভায় বক্তারা শিক্ষকদের মর্যাদা, অধিকার ও পেশাগত উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
এতে বক্তব্য রাখেন বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, বিয়ানীবাজার মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি ও দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান বাশিস সভাপতি ও জমশেদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুদ দাইয়ান, বাশিস সচিব ও বিয়ানীবাজার বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কান্তি তালুকদার, খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ও বাশিস সহসভাপতি আব্দুল মালিক, এবং বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ মাহবুব আহমদ প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন—
“ম্যানেজিং কমিটির নামে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষককে অপমান করা কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজনমূলক আচরণ কোনোটিই কাম্য নয়। শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করা, নিয়োগে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা বজায় রাখা, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাথিউরা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আলীম, কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম সেলিম, বাগবাড়ি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান মুক্তা, নালবহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমদ, দেউলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিফতাউল-বর চৌধুরী, লাউতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন, বাহাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রত্নময় দাস, দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিন, কাকরদিয়া তেরাদল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানসহ বাশিস নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, শিক্ষকতা পেশা কেবল পেশা নয়, এটি একটি নৈতিক ও মানবিক আহ্বান। শিক্ষকের সম্মান রক্ষা ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাদের অভিমত—
“শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে, শিক্ষা বাঁচলে জাতি বাঁচবে।”