পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
সিলেটের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোমে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯)–এর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সৃষ্ট উত্তেজনার পর কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া অভিযোগ-প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। ট্রাস্টি বোর্ডের জরুরি বৈঠকে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৫ দফা দাবি ও ৬টি সংস্কার প্রস্তাবনা স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত ভাইস প্রিন্সিপাল ও আরও দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, বাকি সংস্কারমূলক কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যকরী ব্যবস্থা চলমান আছে।
ঘটনাপ্রবাহ: গত বুধবার নিজের বাসা থেকে আজমানের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ; প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা হিসেবে ধরা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। ঘটনায় দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও স্থানীয় সংবাদে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে—পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় কলেজ থেকে তাকে টিসি দেওয়া হয়েছে এবং ওই প্রক্রিয়ায় তার ও পরিবারের প্রতি কর্তৃপক্ষের কটু ব্যবহার, অপমান ও অবহেলার অভিযোগ ওঠে। আজমানের মা কাঁদতে-কাঁদতে প্রশ্ন তুলেছেন, “আমার পুয়ারে বেইজ্জত করলো কেনে?”—যা এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার করে।
অভিভাবক ও সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া তীব্র ছিল; রোববার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলন করে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দাবি ঠিক না মানলে কঠোর অবস্থান নেবার হুঁশিয়ারি দেয়। কর্তৃপক্ষের প্রতি অভিযোগ-প্রতিবেদনে সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও যোগ দেন, তারা বলেন—কিছু শিক্ষকের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকায় অপব্যবহার হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রতি মৌলিক সহানুভূতি ও সহায়তা নেই।
ট্রাস্টি বোর্ডের জরুরি সভায় এসব দাবি-প্রস্তাবনা পর্যালোচনার পরে প্রশাসন তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেয়া এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবহ পদক্ষেপ গ্রহন করে। কলেজ অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) মুনীর আহমেদ কাদেরী প্রেস ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেন যে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে গিয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।
এদিকে, পুলিশি তদন্ত চলমান রয়েছে; হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আশা করেন যে, চলছে থাকা তদন্ত ও প্রশাসনিক সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানবিক পরিবেশ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। আজমানের ট্র্যাজেডি শিক্ষাজগতকে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে—শিক্ষার্থীর দুর্বলতাকে অপমান নয়, সমর্থন দিয়ে উত্তরণের পথ তৈরি করা প্রয়োজন।