“ফুটপাত ফিরেছে পথচারীর দখলে”
পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক :
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রধান সড়কের দু’পাশ দীর্ঘদিন ধরে ছিল হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে। ফুটপাতগুলোতে ছিল নানা পণ্যের পসরা; ফলে পথচারীদের চলাচলে ছিল চরম ভোগান্তি। নিত্যদিন পণ্য বেচাকেনার কারণে ফুটপাতে ভিড় লেগেই থাকত, যা যানজটকে করে তুলত নিত্যদিনের যন্ত্রণা।
তবে সেই চিরচেনা শহরের চিত্র বদলে গেছে ১ আগস্টের ভোর থেকে। প্রশাসনের নির্দেশে অবৈধ দখলদাররা নিজ উদ্যোগে ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ায় নতুনভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। সকাল থেকেই হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা গুটিয়ে নেন, আর শুক্রবার দুপুর ২টার পর শুরু হয় বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের যৌথ অভিযান।
বিকেল ৬টা পর্যন্ত টানা অভিযানে রাস্তার পাশে থাকা দোকানগুলোর বর্ধিত অংশ অপসারণ করা হয়। পৌর শহরে পরিচ্ছন্নতা ও চলাচলের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগকে স্থানীয়রা বলছেন ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’। বৃষ্টির মাঝেও অব্যাহত থাকা এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক গোলাম মোস্তাফা মুন্না। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী, থানা পুলিশ ও অন্যান্য সহকারী কর্মকর্তারা।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান। তিনি জানান, “ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পুলিশের টহল আরও জোরদার করা হবে। জনসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট থাকবো।”
এদিকে, ফতেহপুর এলাকার বাসিন্দা হাবীবুর রহমান বলেন, “ফুটপাত হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট অনেকটা কমে গেছে। শহর এখন অনেক স্বস্তিদায়ক।”
বিয়ানীবাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জিয়া উদ্দিন জানান, “আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রশাসনের নির্দেশে আমরা ফুটপাত ছেড়ে দিয়েছি।”
দীর্ঘদিন ধরে থানা মোড় থেকে দক্ষিণবাজার কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে রাখা হতো। কেউ নিজের দোকানের সামনে অন্যকে ভাড়া দিত, কেউ আবার রাস্তা দখল করে পণ্য বিক্রি করত।
এই প্রেক্ষাপটে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “ফুটপাত ফাঁকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে। এতে ব্যবসায়ীরাও খুশি। আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন বলেন, “এটা প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধারা ধরে রাখতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পুলিশের ভূমিকা আরও জোরালো হওয়া দরকার।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক গোলাম মোস্তাফা মুন্না বলেন,
“ফুটপাত পথচারীর, এটি সকলকে মানতে হবে। ফুটপাতের জায়গায় কেউ যেন অবৈধভাবে দোকান না বসায়, সে বিষয়ে পৌরবাসীকে সচেতন থাকতে হবে।”
শহরের এমন চেহারা দেখে অনেকে বলছেন, এই অভিযান শুধু প্রশাসনিক নয়, নাগরিক সচেতনতারও বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।