আতাউর রহমান, প্রধান প্রতিবেদক :
একজন মানুষ—যিনি জীবনভর আলোক ছড়িয়েছেন।
একজন শিক্ষক—যিনি জ্ঞানের বাতি হাতে অসংখ্য হৃদয়কে আলোকিত করেছেন।
একজন সংগঠক—যিনি সমাজ বদলে দেওয়ার স্বপ্নে একদিন পথে নেমেছিলেন।
তিনি মজির উদ্দিন আনসার—একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সমাজ সংস্কারক এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত উপদেষ্টা।
জীবনের ৭৩টি বছর তিনি ব্যয় করেছেন শিক্ষার আলো ছড়াতে, মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে। অথচ আজ এই মানুষটিকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়—একজন প্রেসমেকার ব্যবহারকারী অসুস্থ বৃদ্ধ হিসেবে, যিনি বুকের গভীরে আজও সহ্য করে চলেছেন অসম্ভব কষ্ট।
সময়ের নির্মম ছোবলে তিনি নিজ হাতে বহন করেছেন নিজের সন্তানের লাশ—কন্যার, পুত্রের। স্বাভাবিক নয়, ছিল অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই বেদনাকে হৃদয়ে পাথরের মতো বয়ে চলা এক সংগ্রামী মানুষ আজও বেঁচে আছেন মনোবল নিয়ে—কারণ তিনি ভেঙে পড়লে সমাজের বিশ্বাসটিও হারিয়ে যাবে।
কিন্তু এই সমাজ কি তাকে সম্মান করতে পেরেছে?
আজ কেউ কেউ তাঁর নাম ব্যবহার করে চাচ্ছেন সাহায্য। নিচ্ছেন মসজিদের নামেও টাকা। অথচ মজির উদ্দিন আনসার স্যার স্পষ্টভাবে— তিনি চাইছেন মানুষের দোয়া, চাইছেন সহমর্মিতা, চাইছেন মর্যাদাপূর্ণ আচরণ। সাহায্যের নামে যেন তাঁকে অবহেলার পাত্রে পরিণত না করা হয়।
গত ২৪ মে শনিবার মজির উদ্দিন আনসার স্যারের সাথে তাঁর বাসায় সাক্ষাৎ হয়। তিনি ছিলেন দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ড্রেসমেকার লাগানো স্থানে পানি ধরেছে। মানসিকভাবে আগের মতো নেই। আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন—
“আমি অসুস্থ, দোয়া চাই। কিন্তু দয়া করে আমার অসুস্থতাকে, আমার নামকে পুঁজি করে কেউ যেন মিথ্যা আবেগ বিক্রি না করে। মানুষের সাহায্য তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন তা হয় সততার সঙ্গে, সম্মানের সঙ্গে।”
এই আর্তি আমাদের সকলের প্রতি দায়বদ্ধতার ডাক।যে মানুষটি সারাজীবন আলো জ্বালিয়েছেন, আজ তাঁর নাম যেন অন্ধকারের ব্যবসা না হয়।
যে মানুষটি বুক চিতিয়ে শিক্ষার বাতিঘর হয়ে ছিলেন, আজ তাঁর কণ্ঠ যেন দয়ার নামে অবহেলার প্রতিধ্বনি না হয়।
চলুন, আমরা তাঁর পাশে দাঁড়াই—সম্মানের সঙ্গে, হৃদয়ের আন্তরিকতায়।
চলুন, আমরা দোয়া করি এই আলোকবর্তিকার জন্য—যেন তিনি শান্তি ও মর্যাদার সঙ্গে কাটাতে পারেন তাঁর শেষ বয়সের দিনগুলো।
সম্মান দিন তাঁকে, দয়া নয়। সহমর্মিতা দিন, করুণা নয়।