পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক : প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা বিস্তারে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপে বিয়ানীবাজারের ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা হয়েছিল ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, মডেম, ওয়াই-ফাই রাউটারসহ মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনার প্রয়োজনীয় উপকরণ। উদ্দেশ্য ছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে আগ্রহী করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানো। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
সরেজমিনে জানা গেছে, বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের ডিজিটাল সরঞ্জাম এখন শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীদের বাড়িতে। নিরাপত্তার অজুহাতে বিদ্যালয় চত্বরে না রেখে এসব উপকরণ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন অনেকে। ফলে প্রজেক্টরের বড় পর্দায় ক্লাস করার যে পরিকল্পনা ছিল, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্প এখন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩ ও ৪) এর আওতায় সরবরাহ করা হয় এসব উপকরণ। ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিমাসে ২০ জিবি ডেটার প্যাকেজও চালু রয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে একাধিক ল্যাপটপ ও ওয়াই-ফাই সংযোগ দেওয়া হলেও সেগুলোর ব্যবহার যথাযথ হচ্ছে না। বরং সরকারি ডেটা ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপ চালাতে।
কোনো বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ থাকলেও প্রজেক্টর নেই, কোথাও প্রজেক্টর থাকলেও নেই ল্যাপটপ—এমন অসঙ্গতির তথ্য দিয়েছেন শিক্ষকরা। অনেক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে আছে কিবোর্ড, ব্যাটারি ও সাউন্ড সমস্যায়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব জানিয়েছেন, সচল সরঞ্জামের সংখ্যা নিয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
বিদ্যালয় পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাউটার টেবিলের নিচে পড়ে আছে, ছুটির দিনে বাড়ি নিয়ে যান দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চুরির আশঙ্কায় এগুলো বাড়িতে রাখেন বলে দাবি করেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পারভেজ তালুকদার বলেন, “শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে কিছু বিদ্যালয়ে। ডিজিটাল ক্লাস বাধ্যতামূলক। সরঞ্জাম বাড়িতে থাকা অনুচিত। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সরকারি এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিতই থাকবে বিয়ানীবাজারের প্রায় ১৫ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী।