প্রধান প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ ছায়া কাটিয়ে অবশেষে দেশের মানুষ ফিরে পেয়েছে বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪১৩ বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদযাপন মফস্বল শহরগুলোতে রূপ নিয়েছে এক অনন্য মিলনমেলায়। বিয়ানীবাজারে এবারের নববর্ষ পালনের রূপ ছিল একেবারে ভিন্ন—আলোকিত, প্রাণচঞ্চল এবং সর্বজনীন। এ যাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সকালের প্রথম প্রহরেই বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া এই বর্ণাঢ্য ও আনন্দঘন শোভাযাত্রা উপজেলা চত্তর এসে শেষ হয়। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বর্ণিল মুখোশ, রঙিন ফেস্টুন, আর ‘আসুন ভালো থাকি’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এই শোভাযাত্রা যেন ছিল ফ্যাসিবাদের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের প্রতিচ্ছবি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়— লোকগান, নাট্যাভিনয় এবং কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন শিল্পীবৃন্দ। শিশুদের জন্য ছিল চিত্রাঙ্কন ও খেলাধুলার প্রতিযোগিতা আর পিঠাপুলি মেলা বসে।
নববর্ষের নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, পহেলা বৈশাখ দেশের বর্ণিল উৎসবগুলোর অন্যতম একটি উৎসব। আজ নতুনদের চোখে-মুখে তৃপ্তির ঝিলিক। দীর্ঘ দুঃসময় পার করে এক নতুন ভোরের আনন্দে সবাই উদ্বেলিত। নববর্ষ যেন এবার কেবল একটি ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের দিন নয়—এটি ছিল নতুন আশার, নতুন জীবনের প্রতীক। তরুণ প্রজন্ম সেখানে দাঁড়িয়ে ইতিহাস শুনেছে—শুধু শ্রবণে নয়, হৃদয়ে ধারণ করার জন্য। যেখানে বাঙালি জাতি পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বরণ করে নিয়েছে নতুন বছরকে।
এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাজী শারমিন নেওয়াজ, অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উজ্জামান, কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম, সমাজসেবা কর্মকর্তা অনুজ চক্রবর্তী, উপজেলা প্রকৌশলী দিপক কুমার নাথ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান প্রমুখ।
বিয়ানীবাজারসহ দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবারের নববর্ষ উদযাপন দেখিয়ে দিয়েছে—মানুষ যখন স্বাধীনতা ফিরে পায়, তখন উৎসব হয় শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বেঁচে থাকার এক গভীর আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।