মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক ও কিলো ফ্লাইটের কমান্ডারকে হারাল জাতি
মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক, ‘কিলো ফ্লাইট’-এর কমান্ডার এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ কে খন্দকারের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেন,
“আব্দুল করিম খন্দকার, যিনি এ কে খন্দকার নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন প্রকৃত বীর ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে তিনি নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতে সুন্দর একটি স্থান দান করুন।”
এ কে খন্দকার ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রখ্যাত সেনানায়ক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতীক। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে ভারতে যোগ দেন এবং মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে প্রশিক্ষণ ও সামরিক অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে তার নেতৃত্বেই গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বিমান ইউনিট ‘কিলো ফ্লাইট’। সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এই ইউনিট শত্রুর বিরুদ্ধে একাধিক সাহসী ও কৌশলগত অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এ কে খন্দকার। তিনি বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বাহিনীকে একটি শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। ২০১১ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। তার নামানুসারেই ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটির নামকরণ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন এ কে খন্দকার। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পাবনা-২ (বেড়া–সুজানগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দায়িত্বশীল রাজনীতির পরিচয় দেন।
ব্যক্তিজীবনে এ কে খন্দকার ছিলেন সজ্জন, বিনয়ী ও দেশপ্রেমে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। তিনি দুই ছেলে, এক কন্যা ও তিন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এর আগে গত ৮ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার সহধর্মিণী ফরিদা খন্দকার ইন্তেকাল করেন।
তার মৃত্যুতে দেশ হারাল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ সামরিক নেতা ও প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক। জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে এ কে খন্দকারের অবদান ও ত্যাগকে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯