আতাউর রহমান, পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক:
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে অনেক উপজেলা—শহর ধীরে ধীরে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত হতে থাকে। বিয়ানীবাজারেও একই ধারা দেখা গিয়েছিল; ৬ ডিসেম্বর একটি চিহ্নিত দিন হিসেবে স্থানীয় মানুষের মুখে-বইয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকে — এই দিনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের প্রচেষ্টা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পলায়নের ফলে উপজেলা মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এই তথ্য ও স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো স্থানীয় গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিন্তায় উঠে আসে।
যুদ্ধ ও স্থানীয় লড়াই
স্থানীয় বর্ণনায় বিয়ানীবাজার উপজেলায় মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে পাকবাহিনীর সরাসরি সংঘর্ষের উল্লেখ আছে—বিশেষ করে পূর্ব মুড়িয়া অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একাধিক সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল। স্থানীয়রা জানায়, কিছু জায়গায় পাকবাহিনী দখল করে নির্যাতন চালায়; নির্যাতিতদের আটকে রেখে হত্যা ও গণকবরের ঘটনাও ঘটেছিল বলে বহু স্মৃতি-প্রবন্ধে বর্ণিত। এই সকল ঘটনা স্থানীয় মানুষের আক্রান্ত স্মৃতি এবং থানার আশেপাশে স্মৃতিসৌধে আজও প্রতিফলিত।
আঞ্চলিক সামরিক প্রেক্ষাপট ও অপারেশন
বিয়ানীবাজার ছিল সিলেট বিভাগীয় যুদ্ধে সংযুক্ত একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু। বড় চরমপুঞ্জি সিলেট অভিযানের (Battle of Sylhet) সময়—ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় ও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে; ওই সময়ের সূত্রগুলোতে দেখা যায় কুলাউড়া, মৌলভীবাজার ও সন্নিহিত অঞ্চলে (যার মধ্যে বিয়ানীবাজারও পড়ে) পাকিস্তানি সম্মিলিত প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধাপে ধাপে অঞ্চলগুলো হস্তান্তরিত হয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিরোধ না করে সরে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
হতাহতের সংখ্যা ও স্মরণ
কয়েকটি স্থানীয় প্রতিবেদন উল্লেখ করে বিয়ানীবাজারে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যা — যেমন স্থানীয় সূত্রে ১২৪ জন শহীদ কথাও পাওয়া যায়। তবে শহীদ ও নির্যাতনের সঠিক সংখ্যার বিভিন্ন সুত্রে পার্থক্য থাকতে পারে; তাই নথি-ভিত্তিক চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ চাইলে সরকারি মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তালিকা বা স্থানীয় ট্রাস্ট/আর্কাইভ দেখা উত্তম। স্থানীয় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোও ৬ ডিসেম্বরকে বিয়ানীবাজার মুক্ত দিবস হিসাবে প্রতি বছর অঞ্জলি-শ্রদ্ধা ও স্মারক অনুষ্ঠান পালন করে।
স্মৃতিসৌধ ও সুরক্ষার উদ্বেগ
স্থানীয় সংবাদে প্রকাশিত রিপোর্টগুলোতে উল্লেখ আছে — কিছু স্মৃতি-চিহ্ন ও গণকবর সম্পর্কিত স্থান যথেষ্ট সুরক্ষিত নয় এবং কয়েকটি স্থানে নজরদারির অভাব রয়েছে; ফলে ইতিহাসের অংশ হারিয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কা আছে। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমিটি যদি যৌথভাবে সাইটগুলো সংরক্ষণ ও তথ্য সংগৃহীতায় উদ্যোগ নেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ঐতিহাসিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য জরুরি।
কেন ৬ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ
বিয়ানীবাজারের মুক্ত দিবস কেবল ঐতিহাসিক একটি তারিখই নয়—এটি স্থানীয় মানুষের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী স্মৃতির সাক্ষ্য। স্থানীয় গণস্মৃতি ও ঢেউ-দেহী নথিগুলো সংরক্ষণ করে, সচেতনভাবে শিক্ষা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠান চালিয়ে গেলে জাতির সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিয়ানীবাজারের দিনটি চিরস্মরণীয় থাকবে। স্থানীয় ইতিহাস, মৃতদের তালিকা ও স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯