আতাউর রহমান :
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে “জুলাই অভ্যুত্থান” এক আলোচিত অধ্যায়। সেই সময় সাভারে গুলিতে প্রাণ হারান এক সাধারণ রিকশাচালক, নাম রনি। তাঁর মৃত্যু যেমন এক মায়ের বুক শূন্য করে দেয়, তেমনি সমাজে ছড়িয়ে দেয় গভীর বেদনা ও প্রশ্ন। মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় ধরে রনির মা বাস করছিলেন এক জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে—কাদামাটির দেয়াল, ভাঙা দরজা আর অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু ভাগ্য একদিন বদলে যায়। ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের উদ্যোগে রনির বিধবা মাকে বগুড়ায় একটি নতুন পাকা ঘর উপহার দেওয়া হয়। পুরোনো ঘরের ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসা এই ঘর যেন এক নতুন জীবনের প্রতীক।
মানবিকতার জয়গান
নিজ জন্মদিন উপলক্ষে জাইমা রহমানের এই পদক্ষেপ সাধারণ রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি এক নিখাদ মানবিকতার দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন, রাজনীতি কেবল ক্ষমতার নয়, এটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি নৈতিক দায়িত্বও বটে। উপহার পাওয়ার পর রনির মা আবেগে বলেন— “আমার ছেলেকে হারিয়েছি; কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আবার একটা পরিবার পেয়েছি।”
এই এক বাক্যেই ধরা পড়ে তাঁর অনুভবের গভীরতা—বেদনার ভিতরেও মানুষ খুঁজে নেয় আশার আলো, ভালোবাসার বন্ধন।
জুলাই অভ্যুত্থান ও এক মায়ের দীর্ঘশ্বাস
সাভারের রাস্তায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে যখন মানুষ প্রতিবাদের মিছিলে উত্তাল, তখন রনি ছিলেন তাঁর রিকশা নিয়ে জীবিকার পথে। গুলিবর্ষণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। পরের দিনই তাঁর লাশ ফিরে আসে গ্রামের ঘরে, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর মা—যে জানতেন না, তিনি আর কখনো ছেলের মুখ দেখতে পাবেন না।
এরপর থেকে তাঁর জীবন কাটে দারিদ্র্য, নিঃসঙ্গতা ও অবহেলার মধ্যে। সরকার বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের আনুষ্ঠানিক সহায়তা না পেয়ে, তিনি ভরসা হারিয়েছিলেন সমাজের প্রতি।
অনুসন্ধানে উঠে এলো মানবিক এক দৃষ্টান্ত
বগুড়ায় যে নতুন ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে শুধু পাকা দেয়াল ও টিনের ছাউনি নয়—আছে মানুষের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও শ্রদ্ধা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটি নির্মাণে জাইমা রহমানের ব্যক্তিগত তহবিলের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও যুক্ত হয়েছেন। বাড়ির উদ্বোধনের দিন ছিলো এক উৎসবমুখর দৃশ্য—পাড়ার মানুষ, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষণ: রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবিকতার বার্তা
সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
প্রথমত, এটি মানবিক রাজনীতির পুনর্জাগরণ—যেখানে মানুষই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। দ্বিতীয়ত, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। তৃতীয়ত, তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা হিসেবে এটি দেখায়—ক্ষমতার বাইরে থেকেও সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
পুরোনো ছবির ভাষা: ধ্বংস থেকে পুনর্জন্ম
ছবির তুলনাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে রূপান্তরের গল্প।
ছবিতে দেখা যায় ভাঙা কাদা দেয়াল, দরজার সামনে শুকনো ঘাস, আর অবহেলার ছাপ। নতুন ছবিতে দেখা যায় এক উজ্জ্বল বাস্তবতা—পাকা ঘর, নতুন রঙ, পানির ট্যাংক, আর হাসিমুখের মানুষ। এ যেন এক মায়ের জীবনের নতুন অধ্যায়, যেখানে দারিদ্র্যের জায়গায় জায়গা নিয়েছে মর্যাদা ও নিরাপত্তা।
সহমর্মিতার শক্তি
একজন রিকশাচালকের মৃত্যু হয়তো রাষ্ট্রের পরিসংখ্যানে ছোট একটি সংখ্যা, কিন্তু এক মায়ের কাছে সেটিই সমগ্র পৃথিবী। ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের এই মানবিক পদক্ষেপ আমাদের মনে করিয়ে দেয়— রাজনীতি যদি সত্যিকার অর্থে মানুষের কল্যাণে হয়, তবে তার প্রভাব রক্তে নয়, ভালোবাসায় মাপা উচিত।
রনির মায়ের নতুন ঘর কেবল একটি আশ্রয় নয়—এটি বাংলাদেশের সমাজচেতনাকে নতুন করে ভাবতে শেখানোর এক প্রতীক।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯