আবু তাহের
সম্মানিত অভিভাবক, আজ কোনো ভূমিকা নয়, কোনো শিক্ষাবিদের তত্ত্ব নয়—সোজাসাপটা কয়েকটি কথা বলব। হয়তো অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত করবেন, আবার কেউ কেউ সহমত পোষণ করবেন। সকলকেই আগাম ধন্যবাদ জানাই।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই—আপনারা আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। এটি একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। কিন্তু সন্তানকে আরও এগিয়ে নিতে গিয়ে অনেক অভিভাবক বিদ্যালয়ের সময়ের বাইরে একাধিক স্থানে প্রাইভেট বা কোচিং পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। এ বিষয়ে আমার সরাসরি আপত্তি নেই, তবে একটি প্রশ্ন রাখা প্রয়োজন—একটি প্রাইভেট ক্লাসের জন্য আসলে কত সময় ব্যয় হয়, এবং শিক্ষার্থী সেই সময়ের কতটা সত্যিই পড়াশোনায় দেয়? বাস্তবতা হলো, মাত্র ৩০ মিনিটের পাঠের জন্য নষ্ট হয় প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
একটু চিন্তা করে দেখুন—একজন শিক্ষার্থী যদি প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা নিজে মনোযোগ দিয়ে না পড়ে, তবে সে কি তার কাঙ্ক্ষিত শিখনদক্ষতা অর্জন করতে পারবে? বিদ্যালয়ের পাঠকাল প্রায় ৬ ঘণ্টা, যেখানে শিক্ষকগণ তাকে দিকনির্দেশনা দেন, কঠিন বিষয় সহজ করে বোঝান। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসায় আরও ২ ঘণ্টা ব্যয় হয়। ঘুমের প্রয়োজন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা, ধর্মীয় উপাসনা ১ ঘণ্টা, খেলাধুলা, খাবার ও নৈমিত্তিক কাজে লাগে অন্তত ২ ঘণ্টা। এরপরও যদি প্রাইভেট পড়ার জন্য সময় বরাদ্দ করা হয়, তবে শিক্ষার্থীর নিজের পড়ার সময়ই কমে যায়। এতে হিতে বিপরীত ফল হয়।
একটি শিশুর মানসিক চাপ সহ্য করার সীমা আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ দিলে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর জন্য চাপ দেন। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকরাই প্রাইভেটের জন্য শিক্ষককে উৎসাহিত বা অনুরোধ করেন। এটি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর একটি প্রবণতা।
প্রাইভেট পড়ানোর জন্য যে সম্মানী প্রদান করা হয়, তার অর্ধেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যয় করলে এবং বাকি অর্ধেক সন্তানকে সুষম আহার ও মানসিক বিকাশে কাজে লাগালে তার মেধা, মনোযোগ ও শারীরিক সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সন্তান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। সময় বের করে সম্মানের সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে আলাপ করুন। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক—তিন পক্ষের মধ্যেই দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহি তৈরি হবে। ফলাফল হবে ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী।
পরিশেষে বলব—প্রাইভেট পড়াকে যদি আমরা সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারি, তবে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আমাদের অনেক সন্তান প্রকৃত শিক্ষার পথ থেকে সরে যাবে। তাই এখনই প্রয়োজন ভাবনার পরিবর্তন—যাতে শিক্ষা হয় আনন্দময়, সৃজনশীল এবং মানবিক বিকাশের হাতিয়ার।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯