পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক:
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন এই আসনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দলীয় ঐক্যের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ এলাকা ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির একটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ সালে বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান প্রথম এই আসন জয় করেন। এরপর আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সময়ের পালাবদলে বিজয়ী হলেও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি তাদের প্রভাব ধরে রেখেছিল।
২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরপর তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে মাঠে থেকে নিজেদের রাজনৈতিক উপস্থিতি জানান দেয়। সে সময় বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন—ভোটের আগে ব্যাপক হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে প্রচারণা ব্যাহত হয়েছিল।
তবে গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে গণসমাবেশ, মানববন্ধন ও সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি এখন আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হওয়ায় বিএনপি এখন মাঠে এককভাবে দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তি। এ অবস্থাকে স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বিএনপির পুনর্জাগরণের সময়’।
ভিডিও বার্তায় ঐক্যের আহ্বান
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বলেন—
“সিলেট-৬ আসনে বিএনপির ডজনখানেক প্রার্থী নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড বিব্রত। ২০১৮ সালের আন্দোলনে এ আসনের ১০ জন কর্মী শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন; তাই এবার জোটের বাইরে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা দিলে তা নেতাকর্মীদের হৃদয়ে আঘাত হানবে।”
তিনি আরও আহ্বান জানান—
“সব প্রার্থী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক ঠিকিয়ে রাখুন। এই আসন বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি—এ কথা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে জানাতে হবে।”
সিদ্দিক আহমদের এই বার্তা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মন্তব্য করেন—এই আহ্বান দলের ভেতর ঐক্য ফিরিয়ে আনার সময়োপযোগী উদ্যোগ।
এ আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রবাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মুর্শেদ আলম বাবর এক ভিডিও বার্তায় বলেন—
“সিলেট-২ ও সিলেট-৬ বিএনপির ঐতিহ্যের ঘাঁটি। ধানের শীষ মাঠছাড়া করে অতীতেও কেউ কখনো সুবিধা করতে পারেননি। এবারও ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইনশাআল্লাহ বিজয় নিশ্চিত।”
এই বার্তায় প্রবাসী নেতারও স্পষ্ট বার্তা—দলের ঐতিহ্য ও জনসমর্থনের জায়গা থেকে কোনো বিভাজন যেন না ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় দফতরে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবনেতা, প্রবাসী বিএনপির সমর্থনপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও তৃণমূলের জনপ্রিয় কয়েকজন নেতা। তবে এই বহুপক্ষীয় আগ্রহই এখন দলের জন্য এক ধরনের দোটানা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন—দলীয় কোন্দল না মিটলে এই শক্ত অবস্থানও দুর্বল হতে পারে। তবে সময়মতো একক প্রার্থী নির্ধারণ এবং তৃণমূল নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা বাস্তব।
সিদ্দিক আহমদ তার বার্তায় বলেন—
“অনেক বঞ্চনার পর ২০১৮ সালে ধানের শীষ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এবার যেন তা হাতছাড়া না হয়।”
সিলেট-৬ আসনের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা বিএনপির জন্য এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি, তৃণমূলের সংগঠিত শক্তি ও প্রবাসী সমর্থনের সমন্বয়ে এই আসন এখন ধানের শীষের জন্য সবচেয়ে অনুকূল বলেই মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের সুসংহত সিদ্ধান্ত—না হলে সুযোগ আবারও হাতছাড়া হতে পারে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯