পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক: বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। ২৭টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। অনুপস্থিত চিকিৎসকরা বছরের পর বছর হাসপাতালের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ পরিস্থিতি গ্রামীণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও তিনজন কন্সালটেন্ট। তবে কন্সালটেন্টরা শুধুমাত্র অপারেশন হলে দায়িত্ব পালন করেন, তাই ইনডোর ও জরুরি বিভাগের কার্যক্রম মূলত একজন মেডিকেল অফিসার ও কয়েকজন ডিএমএফ চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে প্রায় ৩ লাখাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবায় একমাত্র চিকিৎসককে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা: শেগুফতা শারমিন ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে অনুপস্থিত; আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: জুবায়ের আহমদ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ১লা মে থেকে হাসপাতালে উপস্থিত নেই; ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা: মো: তানভীরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৫ জুলাই এবং ডা: মোছা: রাবিয়া বেগম ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এছাড়া ডা: মো: নাজমুল সাকিবও গত ৩ বছর ধরে হাসপাতালে যোগদান করেননি।
অনুপস্থিত চিকিৎসকরা কোথায় আছেন তা জানে কেউ না। জানা গেছে, কেউ উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন, কেউ আবার রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কারণে পদায়ন সত্ত্বেও যোগদান করছেন না। এমনকি কিছু চিকিৎসক নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পরও আবার অন্যত্র সুপারিশ পেয়ে বদলী হয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান জানান, বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিভিল সার্জন ড: নাসির উদ্দিন বলেছেন, দফায়-দফায় চিঠিপত্র পাঠানো হলেও মন্ত্রণালয়ের পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন—অনুপস্থিত চিকিৎসকদের আর ছাড় দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, বারবার চিঠিপত্র প্রেরণ করা হলেও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন—অনুপস্থিত চিকিৎসকদের আর ছাড় দেওয়া হবে না এবং দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রায় ছয় দশক আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেই সময়ে বিয়ানীবাজারের লংকা টিলা আনারস বাগান রকম ভূমির মালিক হাজী মখলিছুর রহমান চৌধুরী দুই ভাই—হাজী মফিজুর রহমান ও হাজী আতাউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে পাকিস্তান সরকারকে ৫ একর জমি বিনামূল্যে দান করেন। ২৭ জুন ১৯৬০ সালের দলিল (নং ২৮৯২/১৯৬০) অনুযায়ী জমিটি সরকারের নামে নিবন্ধিত হয়। দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী হাসপাতালের দেয়ালে দাতাদের নামফলক সংরক্ষণ এবং পরিবার থেকে একজনকে কমিটিতে রাখার বিধানও রাখা হয়। তখন থেকেই দাতাদের মহানুভবতা বিয়ানীবাজারে জনসেবার এক নতুন অধ্যায় সূচনা হয়।
বর্তমানে হাসপাতালটি সরকারের তত্ত্বাবধানে এবং জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নীত হলেও চিকিৎসক সংকট ও ঔষধের ঘাটতির কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই হাসপাতালের ঐতিহাসিক ভিত্তিকে সম্মান জানিয়ে দ্রুত ডাক্তার নিয়োগ, জরুরি বিভাগ সচল রাখা এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা এখন সময়ের প্রধান দাবিতে পরিণত হয়েছে ।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯