লেখক: Π আতাউর রহমান
আমরা কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করেছি ও নিজেদের রক্ষা করেছি। সেই করোনা ভাইরাসের ঝলমলে রূপ দেখে বিশ্ব তখন সামরিক আগ্রাসন ও সমরযুদ্ধের পথে স্তব্ধ হয়েছিল। কিন্তু করোনা বিদায়ের পর বিশ্ব আবারও আণবিক বোমার দখলে ফিরে গেছে।
আল্লাহর রহমতে, যেভাবে বিশ্ব বদলেছে, আমরাও বদলেছি। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মননশীলতা থেমে গিয়েছিল। তবুও, শিক্ষার্থীরা গোলপোস্টবিহীন মাঠে নিজেদের খেলা ও প্রতিভার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। ২০২৪'র ছত্রিশ জুলাইয়ের পর শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আকারে জাতির সামনে এসেছে।
করোনা আমাদের ভয় দেখায়নি; বরং শৃঙ্খলা, পবিত্রতা এবং নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছে। মানুষের ঐতিহ্য, অহংকার, অঙ্গীকার ও ভাবমূর্তির মূল্য স্মরণ করিয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চান্ন বছর অতিক্রান্ত হলেও, একাত্তুর মুক্তিযুদ্ধ ও ছত্রিশ জুলাই নিয়ে টানাহেঁচড়া কমেনি। সন্দেহ, অবিশ্বাস, হতাশা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব জাতিকে বারবার ঝাঁকুনি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শেক্সপিয়রের ‘শাইলক’ চরিত্রের মতো কৌশলী বিভাজকরা রাজনীতির বিভিন্ন ব্যানারে প্রবেশ করে বিভাজন বাড়াচ্ছে।
ইংলিশ নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কমেডি নাটক “দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস” আমাদের এই বাস্তবতার প্রতিফলন দেখায়। নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনী এ রকম:
ইতালির ভেনিস শহরের সওদাগর অ্যান্টনিও ছিল সৎ, নির্ভীক ও বন্ধুবৎসল। সে বন্ধুরা বিনা সুদে ঋণ নিতে পারতো। কিন্তু অপর এক ব্যবসায়ী শাইলক ছিল নীতিহীন, সুদখোর, কুটবুদ্ধিসম্পন্ন লোক। কেউ তাকে পছন্দ করত না। সে অ্যান্টনিওকে হিংসা করত। সংগত কারণে অ্যান্টনিও তাকে ভালো চোখে দেখত না। অ্যান্টনিওর এক বন্ধু বাসানিও ছিল অমিতব্যয়ী ও বিলাসী। সে শহরের সুন্দরী, বিত্তশালী ও মেধাবী তরুণী পোর্শিয়া’কে বিয়ে করতে চায়।
টাকার অভাবে বাসানিও অ্যান্টনিওর কাছে ঋণ চায়। অ্যান্টনিও শাইলকের কাছে ঋণ নেন। শাইলক সাথে সাথে ঋণ দিতে সম্মত হয়, কারণ পূর্বে অ্যান্টনিওর কাছের অপমানের প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পেয়েছে। ঋণের দলিলে শর্ত থাকে যে, সময়মতো টাকা পরিশোধ না হলে অ্যান্টনিওর এক পাউন্ড মাংস কেটে দিতে হবে।
বাসানিও শেষপর্যন্ত পোর্শিয়াকে বিয়ে করে। কিন্তু টাকা পরিশোধ না হওয়ায় শাইলক অ্যান্টনিওর শরীর থেকে এক পাউন্ড মাংস দাবি করে। আদালতে পোর্শিয়া (তরুণ উকিলের ছদ্মবেশে) পৌঁছালে শাইলককে বলা হয়, মাংস নিতে পারবে, কিন্তু রক্তপাতহীনভাবে। অবশেষে শাইলক বিপদে পড়ে, এবং তার অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়।
এই চরিত্রগুলো আমাদের মধ্যেও বিরাজমান। চরিত্রের দিক থেকে আমরা অ্যান্টনিওর চেয়ে ‘শাইলক’ চরিত্রে বেশি অভিনয় করি—সুবিধা নিতে পছন্দ করি। কিন্তু ফলাফলের অন্ধকার ভাবি না।
একসময় বিদেশী শাসক ও শোষকচক্র আমাদের সোনার বাংলাকে লুন্ঠন করেছিল। তৎকালীন দেশপ্রেমিক বাঙালিরা—শিল্পপতি থেকে শ্রমিক, সচিব থেকে পিয়ন, শিক্ষক থেকে ছাত্র—সকলেই এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল। ৩৬ জুলাই বিপ্লবেও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা অবিচল ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাস্তবায়ন, পদ-পদবি বা ক্ষমতার বাসনা নয়।
আজও স্বাধীনতার পর ‘শাইলক’ চরিত্রের সুবিধাভোগীরা দেশে কূটকৌশল ও তামাশার রাজনীতি চালাচ্ছে। তারা জানে না শিক্ষাদানে শ্রম লাগে, শিক্ষা গ্রহণেও শ্রম লাগে। কায়িক শ্রম যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মেধা ও মননের শ্রম শিক্ষার মূল। পুরনো চিন্তাভাবনা, সংস্কার, অভ্যাস ও চর্চা বদলানোই শিক্ষার প্রকৃত শ্রম। ভোটের রাজনীতি বা সুবিধাভোগী শাইলকরা যদি অপসংস্কৃতিকে লালন করে, তাহলে দেশের সংস্কৃতির মূল ধারা বিকৃত হবে।
মনে রাখুন, স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ, কিন্তু টিকিয়ে রাখা কঠিন। আমাদের স্বাধীনতা রক্ষায় শাইলক চরিত্র সনাক্ত করতে হবে এবং ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে লাল-সবুজ পতাকার আকাঙ্খা বাঁচাতে হবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯