-Π আতাউর রহমান :
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান হয়েছিল। দেশজুড়ে জেগেছিল নতুন স্বপ্ন—একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু এক বছর পর সেই স্বপ্ন বিবর্ণ। নিরাশা আর বেদনায় মানুষ দিশেহারা। প্রশ্ন জাগছে—কে দেখাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাহস?
জাতীয় ঐকমত্যে দায়িত্ব নেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, শান্তিতে নোবেলজয়ী, এক জীবন্ত কিংবদন্তি। দুঃসময়ে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন তিনি। দেশবাসী বিশ্বাস করে—তার আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। তিনি বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজও করে যাচ্ছেন।
তবে গত এক বছরে বাংলাদেশ ভয়ংকর এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে—চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কৃষক, পরিবহন শ্রমিক—কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। নদীর ঘাট, বাসস্ট্যান্ড, সড়ক-মহাসড়ক, সরকারি অফিস, বাণিজ্যকেন্দ্র—সর্বত্র চাঁদাবাজির দাপট। চাঁদা না দিলে হামলা হয়, ব্যবসা দখল হয়, জমির মাটি জোর করে কেটে নেওয়া হয় ইটভাটায় সরবরাহের জন্য। ভয়ংকর এই চক্র দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে, বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদন বন্ধ হবে, দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, জনজীবন থমকে যাবে।
বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছে। তারা যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তাহলে কেন চাঁদাবাজিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না? প্রয়োজন কেবল কঠোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পক্ষপাতহীন আইন প্রয়োগ এবং জাতীয় ঐক্য।
চাঁদাবাজি আজ এমন দানবে রূপ নিয়েছে যা অর্থনীতির শিরায় বিষ ছড়াচ্ছে। নির্বাচনী রাজনীতি, গণতন্ত্র কিংবা উন্নয়নের সব প্রচেষ্টা অর্থহীন হয়ে পড়বে যদি ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে না আনা যায়। এখন যারা চাঁদাবাজ, তারা অতীতের দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের নতুন সংস্করণ। রং বদলানো এ দুর্বৃত্তরা আবারও ক্ষমতার আশপাশে জড়ো হয়েছে। সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ, শিল্পপতিরাও অসহায়।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে জাতিকে উদ্ধারের একটাই পথ—চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। জরুরি ভিত্তিতে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে চাঁদা দাবি করলেই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং যে কোনো পরিচয় বা রাজনৈতিক রঙ নির্বিশেষে শাস্তি নিশ্চিত হয়। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে—আপনার নেতৃত্বেই এটি সম্ভব।
জাতির অভিভাবক হিসেবে আপনার আহ্বানেই সমগ্র জাতি এক হতে প্রস্তুত। যদি ঘোষণা আসে—“চাঁদা যে চাইবে, সে অপরাধী এবং কেউ চাঁদা দেবে না”—তাহলে চাঁদাবাজির মূলোৎপাটন সম্ভব। এ কাজের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলুন। ফ্যাসিবাদ যেভাবে বিদায় নিয়েছে, চাঁদাবাজিও তেমনি বিদায় নেবে। চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই, কোনো রং নেই; তারা কেবল জাতির শত্রু।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর আইন হয়েছে। চাঁদাবাজি দমনের জন্যও একই রকম একটি আইন এখন সময়ের দাবি। এ দেশে যেসব দুর্বৃত্ত অতীতে ক্ষমতার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল, চাঁদাবাজি করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছিল, তাদের প্রতিহত করার এটাই মোক্ষম সময়। আপনার দৃঢ় অবস্থান এবং ঘোষণা জাতিকে মুক্তির পথ দেখাবে।
আর এদেশ চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্বৃত্তমুক্ত হলে আসন্ন নির্বাচন হবে বিশ্বের অন্যতম মডেল। আন্তর্জাতিক মহল দেখবে—কিভাবে একটি দেশ ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছে। গণতন্ত্র হবে অর্থবহ, মানুষের ভোটাধিকার সুরক্ষিত হবে, দেশ পাবে প্রকৃত উন্নয়নের গতি।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ হোক—চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্বৃত্তমুক্ত বাংলাদেশ। যদি এই ব্যাধি দূর না করা যায়, তবে স্বাধীনতার স্বপ্ন, গণতন্ত্রের আশা, উন্নয়নের অঙ্গীকার—সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর যদি দূর করা যায়, তবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে বদলে যাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি শান্তির পথপ্রদর্শক। আপনার নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। এ লড়াই সফল হলে দেশের অর্থনীতি হবে রাহুমুক্ত, মানুষের স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে, ইতিহাসে আপনার নাম অমর হয়ে থাকবে। এখনই সময় কঠোর হওয়ার—নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের শপথ হোক চাঁদাবাজিমুক্ত বাংলাদেশ।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯