পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদন :
সিলেটের সীমান্তবর্তী ধলাই নদীর উৎসমুখে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সাদা পাথর, সবুজ পাহাড় আর মেঘের হাতছানির মায়াবী সমাহার একসময় ভোলাগঞ্জ, সাদাপাথর ও জাফলংকে করে তুলেছিল দেশের শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সংঘবদ্ধ পাথর লুটপাট আজ এই স্বর্গভূমিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকার পাথর পাচার হচ্ছে—এ অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশেই চলছে এই লুটের মহোৎসব।
■ পাথর লুটের প্রেক্ষাপট
গত বছরের সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর ও জাফলংয়ে ফের শুরু হয় পাথর উত্তোলন ও পাচার। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদেই এই লুটপাট হচ্ছে। সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এখনো পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত না হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর সরাসরি আইন প্রয়োগ করতে পারছে না। তবে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযানে সহায়তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
■ জাফলংয়ের ইসিএ ও লুটপাটের হিসাব
২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করা হয়। সরকারি পর্যবেক্ষণে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সেখানে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট পাথর মজুদ ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এক কোটি ঘনফুটেরও বেশি পাথর ও বালি লুট হয়েছে—যার বাজারমূল্য শতকোটি টাকা। এই ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর দুটি মামলা করেছে। আসামিদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই বিএনপির সমর্থক, বাকি ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
■ প্রশাসনের ব্যর্থতা নাকি উদাসীনতা?
পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রশাসন চাইলে লুটপাট ঠেকানো সম্ভব ছিল। কিন্তু সাদাপাথর রক্ষায় তারা কখনোই প্রকৃত চেষ্টা করেনি। এক বছর আগেও কেউ সাদাপাথরে হাত দেওয়ার সাহস পেত না, অথচ এখন প্রকাশ্যে চলছে পাচার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে চাঁদা দিয়ে পাথর তোলা হতো, এখন নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ছাড়া পাথর বিক্রি করা যায় না—এমন এক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু হয়েছে।
■ সরকারের পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পাথরমহালগুলো ইজারামুক্ত রেখে ভিয়েতনামের মতো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে রাজস্ব ও কর্মসংস্থান দুইই বাড়বে, যা পাথর উত্তোলন থেকে প্রাপ্ত আয়ের তুলনায় বহু গুণ বেশি হবে। কিন্তু এর জন্য জরুরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, যা বর্তমানে অনুপস্থিত বলেই মনে করছেন তিনি।
সাদাপাথর ও জাফলং শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অসাধু চক্রের লোভে এই ঐশ্বর্য বিলীন হওয়ার পথে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো এই স্বর্গভূমির সৌন্দর্য শুধু ছবিতেই দেখতে পাবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯